বিএনপি ফরমাল বিরোধীদল নয় : মতিয়া
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি কোনো ফরমাল বিরোধীদল নয়। সম্প্রতিবাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ বক্তব্য দিয়েছে মর্মে বিএনপি মিথ্যাচার করেছে। ভুয়া জিনিস নিয়ে যারা চলতে পারে, তাদের দাবি নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো দরকার নেই।’
রাজধানীর বিয়াম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত বিবিস-বাংলাদেশ সংলাপে প্যানেল সদস্য হিসেবে প্রশ্নোত্তর পর্বে শনিবার সন্ধ্যায় তিনি এ সব কথা বলেন।
দর্শকদের করা ‘চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ কি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন?’ প্রশ্নের জবাবে মতিয়া চৌধুরী এ কথা বলেন।
একই প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য যে কোনো জায়গায়, এমন কী বিএনপি চাঁদে যেতেও রাজি আছে।’
প্যানেল সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাসিম আখতার হুসেইন বলেন, ‘মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা বন্ধ করে ক্ষমতায় টিকে থাকার কথা ভাবলে হবে না। বাইরের কোনো শক্তি নয়, বিরোধীদল আলোচনায় আসার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হবে।’
বিশিষ্ট অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘সংকট নিরসনের কোনো ইঙ্গিত দেখছি না। গণতান্ত্রিক নিয়ম রক্ষা করার জন্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল। মধ্যবর্তী একটি নির্বাচন দেওয়ার কথা ছিল। আর গণতন্ত্র তো শুধু ভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, আরও অনেক অধিকার প্রয়োগ আর সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিষয়।’
‘চলমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে করে কী বলতে পারি যে আমরা সত্যিই একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাস করছি?’ আরেক দর্শকের প্রশ্নের উত্তরে ড. নাসিম আখতার হুসেইন বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সমস্যা তৈরী হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যই। রাষ্ট্রে সহিংসতা বেড়েছে। আর কাউকে অফিসবন্দী বা গৃহবন্দী করে রাখাটাই কোনো গণতান্ত্রিক চর্চা নয়।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যারা মন্ত্রী বা সাংসদ হয়েছেন তারা নিজেরাও নিজেদের ভোট দিতে পারেননি। কারণ ১৫৪টি আসনে তো কোনো ভোটই হয়নি। আর গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব শুধু সরকারেরই না, বিরোধী দলেরও। তাদের সংসদে গিয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া উচিৎ ছিল।’
এ প্রশ্নের আলোচনায় অংশ নিয়ে এক দর্শক বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট কি কেবলমাত্র ক্ষমতার যাওয়ার জন্যই আন্দোলন করছে?’
এ বিষয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ আন্দোলন তো বিএনপির আন্দোলন নয়। এটা সহিংসতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও বিএনপিকে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছিল, পরেও হয়েছে। সারা পৃথিবীর চোখে এটা একটি বৈধ সরকার। খেলার কোনো টুর্নামেন্টে কোনো দল না এলে তো সেই টুর্নামেন্ট বন্ধ হবে না।’
বিএনপির মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করছি না। বিএনপি শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না। এ আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা আছে। জনগণই এ আন্দোলন করছে।’
দর্শকদের প্রশ্ন ‘গণমাধ্যমের ওপর কী কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ চলছে?’ প্রশ্নের জবাবে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘সরকার কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করছে না। পর্ণোগ্রাফি পরিবেশন করায় সংস্কৃতির প্রশ্নে মামলা করেছে। আর কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী যে, ছিন্নমস্তার ভূমিকায় নেমেছিল তা গণমাধ্যমে জনগণ দেখেছে।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ সরকারের মধ্যে কোনো সহিষ্ণুতা নেই।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ভিন্ন মতাবলম্বী অর্থাৎ সরকারবিরোধী কিছু পত্রিকা বা চ্যানেল এর আগেও বন্ধ হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রণ কিছুটা তো আছেই।’
বিবিসির সাংবাদিক আকবর হোসেনের উপস্থাপনায় সংলাপটি পরিবেশিত হয়েছে।