দুই দলের সমাবেশের প্রস্তুতি, ১২ জানুয়ারিকে ঘিরে উত্তেজনা
৫ জানুয়ারির পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে এবার ১২ জানুয়ারিকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে দুই দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। একই সঙ্গে দেশে বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে ৫ জানুয়ারি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করে।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১২ জানুয়ারি আবারো পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডেকেছে উভয় দল। এবারো একই ইস্যু। সরকারের এক বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে এদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলীয় জনসভা করতে চায় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। অপরদিকে একইদিন রাজধানীতে সমাবেশ করতে প্রস্তুতি চলছে বিএনপিতেও। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোনো গ্রিন সিগন্যাল পায়নি কোনো দলই।
এর আগে ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠলে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে সকল ধরণের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সেই নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ থাকলেও উভয় দলের প্রস্তুতিতে কোনো ভাটা নেই ১২ জানুয়ারির সমাবেশের ব্যাপারে।
দেশের সকল মহল ধারণা করছিল, টঙ্গিতে বিশ্ব এজতেমা উপলক্ষ্যে অবরোধ শিথিল করা হবে, কিন্তু তা করা হয়নি। সেই সাথে রাজনৈতিক উত্তেজনায় ঘি ঢেলেছে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহয়ের সাথে বিএনপি চেয়ারপারসের ফোনালাপ বিতর্ক। এরই মাঝে আবার ১২ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে বলতে গেলে আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতি।
জানা গেছে, ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের জনসভাটি হওয়ার কথা ছিল আজ শনিবার। তবে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় অবস্থানরত দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের জরুরি বৈঠকে বিশ্ব ইজতেমার কারণে জনসভার তারিখ পিছিয়ে ১২ জানুয়ারি করা হয়েছে। এর আগেই রাজধানীতে সভা-সমাবেশের ওপর ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে এবং নির্বিঘ্নে জনসভা করা যাবে বলে আশা করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা।
আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা ঘোষণা না এলেও একই দিন পাল্টা সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপিও। দলের নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে ১২ জানুয়ারি সমাবেশ করার এমন আভাসও মিলেছে। দৈনিক সমকাল তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, নেতারা মনে করছেন, ডিএমপি থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে সরকারি দলকে জনসভা করার অনুমতি দেওয়া হলে বিএনপির ক্ষেত্রে বাধা আসবে কেন? এ অবস্থায় তারাও ওইদিন সমাবেশ করার বিষয়ে অনড় ও কঠোর মনোভাব নিয়েই এগোতে শুরু করেছেন। একইসঙ্গে বিশ্ব ইজতেমায় আসা বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢাকার সমাবেশে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ পত্রিকাটিকে জানিয়েছেন, ১২ জানুয়ারির আগেই সভা-সমাবেশের ওপর ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা না উঠলে জনসভা করে আইনভঙ্গ করতে চান না তারা।
এদিকে বিএনপির একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে ১২ জানুয়ারিকে সমাবেশের তারিখ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে দৈনিক সমকাল জানায়, সমাবেশ করতে না পারলেও অবরোধ বলবৎ থাকবে।
নাম প্রকাশ না করে এক সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, গতকাল শুক্রবার দলের দায়িত্বশীল পর্যায়ের একজন নেতা গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার কাছে অবরোধ প্রত্যাহারের সুপারিশ নিয়ে গেলে ক্ষুব্ধ হন তিনি। সাফ জানিয়ে দেন, সরকার দাবি না মানা পর্যন্ত অবরোধ চলতে থাকবে। সরকার সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহারের কথা না বলার নির্দেশও দেন তিনি।
উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারির ইস্যুকে কেন্দ্র করে গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এসময় কার্যালয়ের সামনে এক ডজন ইট-বালু ভর্তি ট্রাক নিয়ে এসে পথ রুদ্ধ করা হয়। তবে খালেদা জিয়ার অবরুদ্ধের কথা উড়িয়ে দিয়ে সেসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন, উনি তো বন্দী নয়। ইচ্ছা করলে এখনই যেতে পারেন।
অপরদিকে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরি বলেছিলেন, ইট ও বালুর ট্রাক খালেদা জিয়ার বাড়ি সংস্কারের জন্য এনে রেখেছেন।
তবে ৫ জানুয়ারি দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন যখন নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে যেতে গুলশানের কার্যালয়ে গাড়িতে চেপে বসেন, তখন সেখানে উদ্ভূত উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পিপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ। পরে তিনি সেখান থেকে বের হতে না পেরে, সেখানেই অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী অবরোধ ডাকেন এবং ২০ দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান এই অবরোধ সফল করতে। সেই থেকে রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের স্থলপথে, বিশেষ করে সড়কপথে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। এর সাথে যোগ হয়েছে রেলের শিডিউল বিপর্যয় এবং লঞ্চের দেরিতে ছাড়া ও পৌঁছার ভোগান্তি।