‘ঘরে যেতে চান যাবেন, বাধা দেওয়া হবে না’
‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ নন’ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি নাকী উনাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছি। উনি যদি ঘরে যেতে চান যাবেন, বাধা দেওয়া হবে না।’
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন সাত দিন ধরে তার গুলশান কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে আছেন বলে দলটির অভিযোগ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনি (খালেদা) কি স্বপ্নে বিভোর, কোন স্বপ্নে বিভোর? সেটা উনিই জানেন। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে উনি মানুষ খুন করবেন, এটা হতে দেওয়া যায় না। জনগণের ওপর জুলুম নির্যাতন বন্ধ করেন। জনগণ ক্ষেপে গেলে কিন্তু খুব খারাপ অবস্থা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি উনার অফিসে কেন? ঘর ছেড়ে অফিসে কেন? অবশ্য এটা উনার পুরান অভ্যাস। মাঝেমধ্যেই উনি ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। উনি অফিস ছেড়ে ঘরে যাক। কেউ উনাকে বাধা দিবে না। উনি আমাদের উৎখাত করতে চান। কিন্তু উনার ডাকে তো কেউ সাড়া দেয় না।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে শেষ করেন ৫টা ১৪ মিনিটে। তার বক্তব্যের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই ছিল খালেদা জিয়াকে নিয়ে কড়া সমালোচনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। আমরা যাদের পরাজিত করেছি তারা এখন তাদের পদলেহন করে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের আগে উনি (খালেদা জিয়া) গোঁ ধরে বসলেন, তিনি নির্বাচনে আসবেন না। কারণ কি? জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারিয়েছে। জামায়াত ছাড়া তিনি নির্বাচনে যাবেন না। তিনি এ-ও জানতেন, নির্বাচনে আসলে তিনি জিততে পারবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারও তার গায়ে ভুত চাপলো। তিনি অবরোধ ডাকলেন। কে মানে তার অবরোধ? উনি জামায়াতকে দিয়ে সন্ত্রাস করছেন। উনি সন্ত্রাসের নেত্রী। জঙ্গিদের নেত্রী। বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখুন। উনার ভেতরে এতটুকু মনুষ্যত্ব থাকলে উনি মানুষের ক্ষতি করতে পারতেন না।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ৪০ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। নির্বাচন যদি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি না পায় তাহলে বিশ্বদরবারে আমাদের এতো সম্মান কেনো? আমরা দুটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। তারা তো এ সংসদেরই সংসদ সদস্য। বিশ্ব এটা বোঝে না। বোঝে উনি আর উনার কুলাঙ্গার পুত্র।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেমন মা তেমন পুত্র। দুজন এক হয়ে দেশের মানুষের উপর নির্যাতন করছেন। স্পষ্ট বলতে চাই, নির্বাচন করেন নাই, এটা আপনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর খেসারত আপনাকেই দিতে হবে। আপনার দলকে দিতে হবে। বাংলার মানুষকে নিরাপত্তা দিতে যা যা করণীয় তাই করা হবে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম,তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
আওয়ামী লীগ নেতাদের চোখে এটি ‘ঐতিহাসিক’ হলেও জনসভায় লোকসংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ হাজারের বেশি ছিল না বলে মনে করেন আগতরা। এ ছাড়া সমাবেশ শুরুর আগমুহূর্তে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেক নেতাকর্মীকে সভাবেশস্থল ত্যাগ করতে দেখা গেছে।