আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনৈতিক অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জ
৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিএনপির আন্দোলনকে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই। দুই দলের নীতিনির্ধারক ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন এ আন্দোলনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে আগামী দিনের রাজনীতি।
বিএনপির আন্দোলন দমাতে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার ব্যতীত প্রায় সব কঠোর পদক্ষেপই নিয়েছে সরকার। বিপরীতে নিজেদের শক্তির সবটুকু দিয়ে কর্মসূচি সফল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে বিএনপি। বাকি আছে অসহযোগের ডাক দেওয়া।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, ঢাকায় কোনো সভা-সমাবেশ না করতে দেওয়ায় তাদের রাজনৈতিক অবস্থানই প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার মুখে পড়েছে। উপরন্তু দলের প্রধানকে অবরুদ্ধ করে রাখায় যেকোনো পরিস্থিতির মুখে আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হয়েছে দলটি।
বিপরীতে বিএনপিকে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক সুযোগ দিতে অনিচ্ছুক সরকার। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, ৫ জানুয়ারির সমাবেশ করে বিএনপি সরকার পতন আন্দোলনের সূচনা করতে চেয়েছিল। সফল হলে আওয়ামী লীগকে ’৭৫ পরবর্তী নাজুক সাংগঠনিক অবস্থায় পড়তে হতে পারে— এ ধারণা থেকেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে দলটি।
সূত্র মতে, অগোছাল বিএনপিকে আন্দোলন গোছানোর সুযোগ না দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। আর সেই ফাঁদে পা দিয়েছে বিএনপিও। অবরোধ কর্মসূচির মতো কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি, যা টেনে সরকার পতন প্রায় অসম্ভব। এই আন্দোলনে ব্যর্থ হলে দলটির অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করে সরকার।
ট্রান্সপারেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকার এবং বিরোধীদের উভয়েই ভাবছেন শক্তি দিয়ে তারা জিতে যাবেন। যদিও একটি পক্ষ (বিএনপি) আলোচনার কথা বলছে, তার পরও পরিস্থিতি অনুভব করে সঠিক পদক্ষেপ আসছে না। এর দায় সরকারের ওপরই বেশী চাপে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নিজেদের স্বার্থেই আলোচনা করা দরকার। না হয় এই সুযোগে অগণতান্ত্রিক ও উগ্রশক্তি সুযোগ নিতে চাইবে। তা আদৌ বাংলাদেশের জন্য শুভকর কিছু হবে না। বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগই।’
সাবেক সেনাপ্রধান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘গণতন্ত্র আজ সঙ্কটে। গত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে এই সঙ্কট তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাস্তবতা মেনে আমাদের কাজ করতে হবে, আলোচনায় বসতে হবে।’
আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিএনপি কোনো সময়েই জনগণের অধিকারের জন্য কাজ করে না। বিশ্ব ইজতেমার সময়ও অবরোধ-হরতাল দিয়ে সেটা প্রমাণ করেছেন। তাদের আন্দোলনে যে জনগণ সম্পৃক্ত নন তা স্পষ্ট।’
দুই দলের চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে সরকার দলে থাকায় শক্তিমত্তার দিক দিয়ে তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে আওয়ামী লীগ। তবে সরকারি সহযোগিতা ছাড়া রাজনীতির মাঠ মোকাবিলা করার উন্মুক্ত আহ্বান জানিয়ে নিজেদের শক্তির কথাও জাহির করছে বিএনপি।
গত সরকারের সময় থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে আওয়ামী লীগ তথা সরকারের নানান কৌশলের কাছে হেরেছে বিএনপি। নতুন সরকারের দ্বিতীয় বছরের প্রথম থেকেই যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে সামনের দিনের জন্য কী ধরনের ইঙ্গিত আসছে? জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সরকার হার্ডলাইন থেকে সরে যাওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। তাই সামনের দিনের রাজনীতি খারাপ হওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট। কোনো দলই সমঝোতার পথে হাঁটছে না। হরতাল-অবরোধ কখনো সমাধান হতে পারে না।’