উপদেষ্টার ওপর হামলা: খালেদাকে একা করার আরেকটি কৌশল
একের পর এক হামলা ও গ্রেফতারের শিকার হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা। গত ৩ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ হওয়ার পর থেকেই একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে একা করে দেওয়ার রাজনৈতিক অারেকটি কৌশল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে মঙ্গলবার রাতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
এর আগে ১০ জানুয়ারি রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে আরেক উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব সাবিহউদ্দিনের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া ১০ জানুয়ারি শনিবার রাতে জনপ্রিয় ব্যবসায়ী নেতা দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর গুলশানের বাসায়, ১১ জানুয়ারি সুপ্রীম কোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেনের মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার বাসায় গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ৮ জানুয়ারি রাত সোয়া ১১টায় সাবেক সচিব শমসের মবিন চৌধুরী ও ১১ জানুয়ারি রাত ৮টা শামসুজ্জামান দুদুকে গ্রেফতার করা হয়।
৩ জানুয়ারির পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দলটির নেতানেত্রীদের দেখা করায় বেশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে পুলিশ প্রশাসন। কড়াকড়ির মধ্যেও যারা তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন। তাদের অনেককেই নানা হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে।
৪ জানুয়ারি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী কয়েকবার চেষ্টা চালিয়েও বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি।
এদিকে রিয়াজ রহমানের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টাদের ওপর হামলার ঘটনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যক্তিকে আক্রমণ করে কোনো আন্দোলন বন্ধ করা যায় না। কেউ হয়ত ভাবছেন ভয়-ভীতি তৈরি করে কাউকে আন্দোলন থেকে সরানো যাবে। এ ধারণা ঠিক নয়। গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করতে হবে। শাসক দলকে বুঝতে হবে দেশটা শুধু ঢাকা শহর না। বিভিন্ন জেলা শহরের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের ভাবতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে বিভিন্ন লোক সুবিধা নিতে পারেন। তাদের ওপর কেন হামলা হয়েছে, কে করেছে সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। সড়কে কঠোর পুলিশি নজরদারির ভেতর কারা এ রকম ঘটনা ঘটাচ্ছে- তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে রাজনীতি চোখের বদলে চোখ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে এর সমাধান হওয়া দরকার। তা না হলে এ ধরনের পরিস্থিতি আরও ঘটবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে আসা উপদেষ্টাদের ওপর গুলিবর্ষণ, গ্রেফতার নির্যাতনের ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে খালেদা জিয়াকে একা করার চেষ্টা হতে পারে। আবার এর উল্টোটিও হতে পারে যে, নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে আমরা কারও কথায় আস্থা রাখতে পারছি না। মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কেউ এ ক্ষোভের সুযোগ নিতে পারেন। তবে যেই করুক, যে উদ্দেশ্যেই করুক এটা নিন্দনীয় ও ভয়াবহ কাজ। এর অবসান হওয়া দরকার। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে দোষীদের আটক করে আইনের আওতায় আনা দরকার।’