অবরোধ নাকি হরতাল, বুঝছে না কেউ
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধে নিস্তার পাচ্ছে না অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি। একই সঙ্গে ককটেল, হাত বোমা, পেট্রোল বোমার বিস্ফোরণে জনমনে আতংক সৃষ্টি করা হচ্ছে প্রতিদিন। বিএনপি জোটের এমন কর্মসূচি পালন নিয়ে বিভ্রান্ত সাধারণ মানুষ।
রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, হরতাল, অবরোধ, এমনকি সভা সমাবেশ ও মিছিলের মতো কর্মসূচির মাধ্যমেও নাশকতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথায় পরিণত হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অবরোধ একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন। দাবি আদায়ের জন্য শুধু মাত্র কোনো রাজনৈতিক দল নয়, যে কেউ সড়কপথ অবরোধ করে দাবি আদায়ের আন্দোলন করতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা সব সময় মহাসড়কগুলোতে আবরোধ কর্মসূচি পালন করতে দেখেছি। এক জেলা থেকে অন্য জেলাতে যানচলাচল বন্ধ রাখার মাধ্যমে অবরোধ করা হয়। এক্ষেত্রে নেতা-কর্মীরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে, রাস্তার ওপর শুয়ে থেকে বা সমাবেশ করে অবরোধ করে থাকে।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবরোধ বলুন আর হরতাল বলুন যেকোনো কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ, যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া, ট্রেনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলার মতো নাশকতার আশ্রয় নেওয়া হয়। শুধু হরতাল বা অবরোধে নয়, সভা সমাবেশ শেষে নিজেদের শক্তির জানান দিতে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা হয় গাড়ি ভাংচুর, না হয় ককটেল ফুটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে।’
তিনি বলেন, ‘সারা দেশে অবরোধ চলছে। বিএনপি নেতারা ঘোষণাও দিচ্ছে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে কর্মসূচি পালন করা হবে। তাই যদি হয়, তাহলে রাজধানীর বিভিন্ন জনসমাগমের ওপর ককটেল নিক্ষেপ, সিটি পরিবহনগুলোতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে কেন। আসলে এটা কি হরতাল নাকি অবরোধ কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না। হরতাল হলেই বা গাড়িতে আগুন দিতে হবে কেন। এগুলো শ্রেফ নাশকতা ছাড়া কিছু না।’
এ ব্যাপারে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে হরতাল বা অবরোধ যা-ই করা হোক না কেন, তার সঙ্গে নাশকতাটা ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত। নাশকতা ছাড়া কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের পতন সম্ভবও হয়নি। এটি অবশ্যই নেতিবাচক একটা বিষয়। এটা কখনও হতে পারে না। কিন্তু এটাই এখন বাস্তবতা। কারণ গণতান্ত্রিক উপায়ে বাংলাদেশে কেউই আন্দোলন করতে পারেনি। এরশাদবিরোধী আন্দোলন কিংবা বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগও নাশকতা করে আন্দোলন করেছে। তখনও গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।’
মান্না বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধীর সেই সময়কার অবরোধ বা অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আমাদের দেশে নেই। অবরোধ পালন করতে যখন নেতা-কর্মীরা রাজপথে অবস্থান করবে তখন তো পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হবে গুলি করতে। তাহলে কীভাবে তারা এটা করবে।’
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ‘তবে বিএনপির বর্তমান কর্মসূচিতে সারা দেশের সঙ্গে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকার মধ্যে কেন নাশকতা করা হচ্ছে। এ ধরণের নাশকতা অবরোধ কর্মসূচির স্বাতন্ত্র্যতা আর রাখে না।’