ইজতেমা ঘিরে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা গোয়েন্দাদের সমাবেশের অনুমতি না পেলে গুলশান অভিমুখে ২০ দলের যাত্রা
দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে রাজধানীতে তিনটি স্থানে সমাবেশের অনুমতি চাইতে পারে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সমাবেশের অনুমতি না পেলে ইজতেমাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি ও আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের আগমনে বাধা দিতে পারে জোটটি—এমন আশঙ্কা গোয়েন্দা সংস্থার।
সরকারের এক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে আগামী ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, প্রেস ক্লাব কিংবা মতিঝিলেল শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি চাইবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটটি।
সমাবেশের অনুমতি না পেলে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের দিন ইজতেমাস্থলে আসার সকল মহাসড়কে অবস্থান করে মুসল্লিদের বাধা দেওয়া ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করবে জোটটি। সেখান থেকে তারা বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করতে পারে বলেও গোয়েন্দা সংস্থার আশঙ্কা।
গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, আগামী ১৬ জানুয়ারি শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা চলমান সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচীর কারণে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নানাবিধ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অবরোধ প্রত্যাহার বা শিথিল করা না হলে প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে না পারার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরুর দিন থেকে ২০ দলীয় ঐক্যজোট সর্বাত্মক অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অনঢ় রয়েছে।
অবরোধ প্রত্যাহার ও শিথিল না করে বিএনপি-জামায়াত জোট বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোট আগামী ১৮ অথবা ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, জাতীয় প্রেস ক্লাব কিংবা শাপলা চত্বরে একটি সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি এ সব স্থানের কোথাও সমাবেশ করার অনুমতি না পায় তাহলে তারা ইজতেমায় ময়দানে আসার মহাসড়কগুলোয় অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করতে পারে।
সে ক্ষেত্রে মুসল্লিদের ইজতেমায় আসার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়াসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য আগে থেকেই গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখাসহ কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়।
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, বিশ্ব ইজতেমার মাঠ ও আশপাশের এলাকায় নানাবিধ অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা করে সরকারকে জামায়াত-শিবির বিব্রতকর অবস্থায় ফেলাসহ দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টা চালাতে পারে। জামায়াত-শিবির আগে থেকেই বিশ্ব ইজতেমা ও তাবলীগ জামাতের প্রতি একটি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে আসছে।
আগামী ১৮ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের দিন জামায়াত-শিবিরসহ ২০ দলীয় জোট সড়ক অবরোধ করে রাখলে আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ ইচ্ছুক মুসল্লিদের তথা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের ভোগান্তিতে ফেলাসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ইজতেমাকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর, জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলো অপতৎপরতার মাধ্যমে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলাসহ বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে পারে। ফলে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের পাশাপাশি কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখা জরুরি।
এ সব ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘অবরোধের মাধ্যমেই বিএনপি জোট দেশের মধ্যে নাশকতা সৃষ্টি করছে। এখন তারা ইজতেমাকে কেন্দ্র করে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করবে। সরকার সব বিষয়ে সজাগ রয়েছে। যাতে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব সুষ্ঠুভাবে হয় সে বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে। এ সব ক্ষেত্রে সকল গোয়েন্দা তথ্য আমলে নিয়েই সরকার কাজ করবে।’
২০ দলের এমন কর্মসূচি সম্পর্কে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।