গ্রেফতার হতে পারেন ২০ দলের শীর্ষ নেতারা : আন্দোলন দমনে সরকারের এক সপ্তাহের পরিকল্পনা
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে শীর্ষ নেতাদের গণগ্রেফতারসহ যৌথবাহিনীর মাধ্যমে বিশেষ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বিএনপির কর্মসূচির ভেতর দিয়ে দেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে আগামী এক সপ্তাহ সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান প্রদর্শন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিশেষ বিশেষ জেলায় যৌথবাহিনীর মাধ্যমে চিরুনি অভিযান পরিচালনা। পুরো সময়ে গণহারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার প্রক্রিয়া চালানো হবে। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হবে ২০ দলীয় জোটের নেতাদেরও। এক সপ্তাহের মধ্যে যেকোনো মূল্যে সারাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যা যা করণীয় তার সব কিছুই করবে সরকার। একাধিক গোয়েন্দা ও সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কিছু সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, এতদিন বিএনপির নেতাদের গ্রেফতার করা হলেও নতুনভাবে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের ওপরও কড়া নজরদারি চলছে। ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতারের একটি তালিকা করা হয়েছে। তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ১৪ দলের এক বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে বলা হয়েছে, সারাদেশ থেকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পক্ষ থেকে নাশকতাকারীদের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হবে। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৪ দলের নেতাদের জানান, তালিকা দেন নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওইসব সূত্র জানায়, মূলত সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থানের কথা ঘোষণা করা হলেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল রয়ে-সয়ে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ পরিকল্পনা অংশ হিসেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সমাবেশের অনুমতি চাইলে তা তাদের দেওয়া হবে।
জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিসহ জোটের নেতাদের ওপর দমন-পীড়ন আরও বাড়িয়ে দেওয়া হবে। সরকারের পরিকল্পনায়, এই এক সপ্তাহ কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের হাজার খানেক নেতাকে গ্রেফতার করা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যায়ে গ্রেফতার করা নেতাকর্মীদের কমপক্ষে ৩ মাস জামিন না পাওয়ার মতো পদ্ধতি অনুসরণ করে মামলা দেওয়ার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।
ওই সূত্রটি আরও জানায়, সরকারের একটি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করা হলেও মামলা দুর্বল থাকার কারণে সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে জামিন মিলছে। ফলে অভিযুক্তরা জেল থেকে বেরিয়েই আবার নাশকতায় জড়িয়ে পড়ে। অবরোধে নাশকতা চলছে এমন জেলাগুলোতে বিজিবির সংখ্যা আরও বাড়ানো পরিকল্পনা রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। প্রতি রাতেই তল্লাশী করার নির্দেশনার পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির যৌথ অপারেশন চলবে জেলাগুলোতে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের প্রবীণ এক নেতা বলেন, ‘এতদিন বিএনপির নার্ভের পরীক্ষা করেছে সরকার। তাই তাদের অনেক ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন আর সেই ছাড় তারা পাবে না।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘সরকারকে ভীষণ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নাশকতাকারীরা বাধ্য করছে।’
এদিকে, বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির নামে দেশে যা ঘটছে তা আন্দোলন নয়, নাশকতা হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায় সরকার। নাশকতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই আন্তর্জাতিক চাপ সামলে নিতে পারবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ ও সরকার।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আন্দোলনকে ছাড় দেওয়া যায়, নাশকতাকে ছাড় দেওয়া যায় না। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সরকার খুব শিগগিরই সফল হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অবরোধের নামে নাশকতার বিরুদ্ধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টির যেকোনো অপচেষ্টায় আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। নাশকতার সব পরিকল্পনা এবং একই সঙ্গে জড়িতদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’ সরকারবিরোধী যেকোনো সহিংসতা মোকাবিলায় রাজপথে সক্রিয় থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলা থেকে বাঁচার জন্য জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এতে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন টিকবে না। আগামী ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
এদিকে বুধবার সকালে চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্র প্রতমন্ত্রী বলেন, ‘রংপুরসহ আরও কিছু এলাকায় যে সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটছে তা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
গত বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়ারি ম্যায়াডনের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে নারকীয় পরিস্থিতি চলছে। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছি।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত জানুয়ারিতে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গিয়েছিল। এবার ভাবিনি যে, এ পরিস্থিতিটা এত লম্বা হবে।’