২০ দলের অবরোধ, ১৪ দলের প্রতিরোধ অস্থিরতা ও সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা
বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী চলমান অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। অন্যদিকে, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলায় শেষ লড়াইয়ের প্রস্তুতি হিসেবে পাড়ায়-মহল্লায় ‘সন্ত্রাস নির্মূল কমিটি’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ১৪ দলীয় জোট।
দেশের প্রধান দুই দলের নেতৃত্বাধীন জোটের পাল্টাপাল্টি এ কর্মসূচিতে সার্বিক পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হতে পারে, চলমান অস্থিরতা ও সহিংসতা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করেন সুশীল সমাজ। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চলমান পরিস্থিতি সমাধানের একমাত্র উপায় বলেও মনে করেন তারা।
গণমাধ্যমে পাঠানো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ঘোষণা দেন, ‘বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহতভাবে থাকবে।’ বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের যে লড়াই চলছে, তা গায়ের জোরে দমনের জন্য অবৈধ সরকার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’
অন্যদিকে, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বৃহস্পতিবার দাবি করেন, ‘বর্তমান সঙ্কট রাজনৈতিক। রাজনৈতিকভাবেই এ সঙ্কটের মোকাবেলা করা হবে। এবারই শেষ লড়াই। এরপর তাদের আর পাওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের শত্রুরা জঙ্গি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র হত্যার জন্য আবারও মাঠে নেমেছে। এই খুনিদের চিহ্নিত করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। ১৪ দলের নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুনর্গঠন করা হবে।’
নাসিম বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে জেলা পর্যায়ে ‘সন্ত্রাস নির্মূল কমিটি’ গঠনের নির্দেশনা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এলাকার সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে। তারা এলাকায় থেকে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করবেন।
দুই জোটের এমন মুখোমুখি অবস্থান জনমনে আতঙ্ক ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন জেগেছে কোন দিকে যাচ্ছে দেশ। বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক জোটের বিপরীতমুখী অবস্থানকে নেতিবাচকভাবেই দেখছেন দেশের সুশীল সমাজ। তারা বলছেন, এ ধরনের ঘোষণা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথকে সংকীর্ণ করে সংঘাতের পথকেই উস্কে দিচ্ছে। তারা মনে করেন, আন্দোলনকারীদেরও সংঘাতের পথ বর্জন করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারেরও সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন’র সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এ প্রসঙ্গে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘প্রতিরোধের ঘোষণা সংঘাতের দিকেই যাবে। এর পরিণতি ভয়ানক হতে পারে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়া প্রতিরোধের মতো কোনো কর্মসূচি দিয়ে সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায় না। ন্যায় ও সত্যের পক্ষে থাকলে মানুষ তা সমর্থন করবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে প্রতিরোধের মতো চিন্তা-ভাবনা নেতিবাচক। এ ধরনের পদক্ষেপ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করবে এবং সংঘাতের সম্ভবনাকে আরও তীব্র করবে। এতে অন্যপক্ষ চুপ করে না থেকে তারাও সহিংসতার পথ বেছে নেবে। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ গণতন্ত্রের জন্য সুখকর হতে পারে না। মানুষ নিরুপায় হয়ে পড়বে। তৃতীয় কোনো শক্তি এর সুযোগ নিতে পারে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সংঘাত-সন্ত্রাস বন্ধ করার জন্য নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করে প্রতিহত করার সংস্কৃতি আছে। আমাদের যে উত্তপ্ত পরিবেশ এবং যে ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি তাতে শান্তিপূর্ণভাবে অশান্তি প্রতিরোধ করা কতটুকু সম্ভব- সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন বেশি উত্তপ্ত থাকে তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরই থাকা উচিৎ।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সংঘবদ্ধ হয়ে যেভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে, গাড়ি ভাঙছে, পেট্রোল বোমা মারছে, এতে অন্য সংগঠনগুলোও উৎসাহিত হচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের বর্তমান কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় সরকারি দলের সংগঠনগুলোর প্রতিরোধের ঘোষণা যৌক্তিক মনে হতে পারে। উভয় পক্ষকেই এ ধরনের শক্তির মহড়া এবং বল প্রয়োগের মাধ্যমে জনজীবন বিপর্যস্ত করার পথ থেকে সরে আসতে হবে। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে।’
তিনি বলেন, উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেখে মনে হচ্ছে ‘সহিংসতার প্রতিউত্তরে সহিংসতা’- এতে শুধু সহিংসতাকেই উস্কে দেবে, মুক্তি মেলবে না। এ ধরনের পথ থেকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে সরে আসতে হবে।’