তারেকের অর্থ যোগানদাতারা চিহ্নিত, জাল গোটাচ্ছেন গোয়েন্দারা
তারেক রহমানকে যারা অর্থ দিচ্ছেন তাদের চিহ্নিত করা শেষ। এবার শুধু জালে আটকানোর পালা। সে কাজও শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে। শিগগিরই হয়তো বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যানের অর্থের যোগানদাতাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সংবাদ মাধ্যমের জানা যায়, তারেক রহমানকে অর্থের যোগান দিচ্ছেন অন্তত অর্ধশতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি। এদের মধ্যে কেউ বাস করেন মালয়েশিয়ায়। কেউবা যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব বা আবুধাবিতে। তাদের সঙ্গে রয়েছেন দেশের কয়েকজন নামী ব্যবসায়ীও। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন শিল্পপতিও রয়েছেন। আছেন চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ীও।
এসব ব্যক্তি লন্ডনে তারেক রহমানের দুটি বাড়ির ভাড়া এবং কথিত চিকিৎসা খরচ, সংসার খরচ ও স্ত্রী-সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মিলিয়ে মাসে কমপক্ষে ছয় হাজার পাউন্ড দেন। তাদেরই যোগানো অর্থে চলে নাশকতামূলক তৎপরতা।
গত ১৩ জানুয়ারি দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, তারেক রহমানকে আর্থিকভাবে যারা সহায়তা করছেন তারা মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও আবুধাবিতে বসবাস করছেন। তাদের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০ জন। তাদের প্রোফাইল তৈরি করছেন গোয়েন্দারা। দেশে তাদের আত্মীয়-স্বজনের ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ীও তারেককে অর্থ জোগাচ্ছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
একই দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, সরকারের নির্দেশে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা ‘নাশকতায় অর্থ জোগানদাতাদের’ ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে। এতে অনেক রাঘব-বোয়ালের নাম এসেছে। এর মধ্যে দেশের প্রায় দুই ডজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, সাবেক মন্ত্রী ও অর্ধশতাধিক প্রবাসী বিত্তশালীকে অস্বাভাবিক পর্যায়ের ‘শীর্ষ অর্থ জোগানদাতা’ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে জমা দেওয়া তিনটি পৃথক গোয়েন্দা প্রতিবেদনেই অর্থ জোগানদাতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থার একাধিক ইউনিটও প্রতিবেদনসহ অর্থ জোগানদাতা ব্যবসায়ীদের দুটি পৃথক তালিকা যাচাই-বাছাই করছে।
কালের কণ্ঠে বলা হয়, লন্ডনে যাওয়ার পর থেকেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা তারেক রহমানকে নানাভাবে সহায়তা করে আসছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয়েছে। অর্থদাতাদের প্রোফাইলও তৈরি করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, একাধিক অর্থ জোগানদাতা প্রায়ই বাংলাদেশে আসেন। তারেকের পক্ষ হয়ে তাঁরা গোপনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে দিকনির্দেশনা নিয়ে যান। লন্ডনে গিয়ে তাঁরা তারেক রহমানের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন। যাদের বেশ কয়েকজন বিদেশি পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, যাঁরা তারেক রহমানকে অর্থ জোগান দিয়ে সহায়তা করছেন তাঁরা বিএনপির আদর্শের অনুসারী। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় তাঁরা মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে বিদেশে চলে যান। তাঁদের বায়োডাটা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা, বগুড়া, সিলেট, হবিগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায়।
ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়াপ্রবাসী মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া প্রতি মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা তারেক রহমানকে দিচ্ছেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
দুবাইপ্রবাসী কুমিল্লার জুলহাস, মালয়েশিয়াপ্রবাসী বগুড়ার মোস্তাফিজুর রহমান, সৌদিপ্রবাসী টাঙ্গাইলের রোস্তম আলীসহ অন্তত অর্ধশত প্রবাসী তাঁকে সহায়তা করছেন। দেশের কিছু ব্যবসায়ীও তাঁকে সহায়তা করছেন। তাঁদের গবিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
কালের কণ্ঠে বলা হয়ে, একসময় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কমর উদ্দিন ছিলেন তারেকের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। কমর উদ্দিনের মৃত্যুর পর লন্ডনপ্রবাসী বিভিন্ন ব্যক্তি তারেককে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। তার ব্যয়ের একটি অংশ দেশ থেকেও পাঠানো হয়।
কালের কণ্ঠে আরো বলা হচ্ছে, লন্ডনে তারেক রহমানের দুটি বাড়ির ভাড়া এবং চিকিৎসা খরচ, সংসার খরচ ও স্ত্রী-সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মিলিয়ে মাসে কমপক্ষে ছয় হাজার পাউন্ড প্রয়োজন হয়। এর একাংশ আসে প্রবাসী বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে। বাকি অংশ যায় দেশ থেকে। তবে তারেক রহমানের মেয়ের পড়াশোনার খরচ এখনো বহন করছে কমর উদ্দিনের পরিবার।
কালের কণ্ঠ পত্রিকায় বলা হয়, কমর উদ্দিনের মৃত্যুর পর তারেক রহমানের একক পৃষ্ঠপোষকতা শেষ হয়ে যায়। তখন দলের প্রবাসী সদস্যরা তাঁকে অর্থ সহায়তা দিতে শুরু করেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর আহমদ ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুহিদুর রহমান এখন যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন। সবাই সিলেটের লোক। এ ছাড়া ব্যারিস্টার এম এ সালাম, মোহাম্মদ সায়েম, তপন, জুয়েল মল্লিকসহ আরো কয়েকজন লন্ডনে তারেক রহমানের কাছের লোক বলে পরিচিত। ক্যামব্রিজ ও অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কয়েকজন শিক্ষক-গবেষক তারেক রহমানের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদের বিষয়টি দেখাশোনা করেন বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর লন্ডনপ্রবাসী মেয়ে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে ব্রিটিশ সরকারের একটি বাড়ি বরাদ্দ পেলেও সেই বাড়িতে না থেকে বিলাসবহুল ভাড়া বাড়িতেই থাকছেন তারেক।
বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, দেশে সংঘটিত বিভিন্ন নাশকতায় অর্থদাতা হিসেবে যেসব ব্যবসায়ীর নাম প্রাথমিক তদন্তেই বেরিয়ে আসে, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে সরকার আরও আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে টাকার যোগানদাতা হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুই শীর্ষ ব্যবসায়ীসহ একজন সাবেক মন্ত্রীকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়। নজরদারিতে রাখা হয়েছে এফবিসিসিআইর এক সাবেক সভাপতিকে। তবে বিএনপি ঘরানার অনেকে ঘন ঘন বিদেশে অবস্থানের মাধ্যমে নিজেদের দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তা থাকাসহ কোনোরকম নাশকতায় সম্পৃক্ত না থাকার বিষয়টি প্রমাণের চেষ্টা চালান। কিন্তু সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বিএনপির মধ্যমসারির ও তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করেই বিতর্কিত ব্যবসায়ীদের অর্থ জোগানের প্রমাণাদি সংগ্রহে সক্ষম হন।
বাংলাদেশ প্রতিদিনে আরো বলা হয়, শুধু দেশের ব্যবসায়ীরাই নন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত দলের প্রবাসী সমর্থকদের কেউ কেউ নানা অজুহাতে বিপুল পরিমাণ টাকার জোগান দিয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এসব অর্থের সিংহভাগই লন্ডনে পালিয়ে থাকা তারেক জিয়ার আশপাশে অবস্থানকারীদের হাতে পৌঁছে। সেখান থেকে বিভিন্ন খাতওয়ারি নানা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশে টাকা পাঠানো হয় বলেও জানতে পারেন গোয়েন্দা সদস্যরা।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বোমাবাজি ও যানবাহন পোড়ানোর একাধিক ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা ‘নাশকতায় অর্থের জোগানদাতাদের’ নাম প্রকাশ করছেন। এতে যেসব ব্যবসায়ীর নাম বেরিয়ে আসছে তাতে অবাক হতে হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, অভিযান চালানোর স্বার্থে কোনো অর্থদাতার নাম এখনই প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে সাবেক মন্ত্রী, শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ী এমনকি দলীয় কার্যক্রম থেকে অনেক দূরে থাকা কারও কারও নামও ‘নাশকতায় মদদদাতার’ তালিকায় রয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও তাদের ব্যাপারে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’র মনোভাব প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে।
কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অনেক প্রবাসী তারেক রহমানকে অর্থ যোগান দিচ্ছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।