শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতার বালিগঞ্জে মারা যান। বাংলা ছাড়াও তার লেখা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি অনিলা দেবী ছদ্মনামেও লিখতেন।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মা ভুবনমোহিনী দেবী। সংসারে বারংবার অর্থকষ্ট ঘটায় মতিলাল বেশির ভাগ সময় পরিবারসহ ভাগলপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। শরৎচন্দ্র ভাগলপুরের তেজনারায়ণ জুবিলী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৮৯৪ সালে এন্ট্রান্স পাস করেন। এফএ ক্লাসে ভর্তি হলেও ১৮৯৬ সালে অর্থাভাবে পড়াশোনায় ইস্তফা দিতে বাধ্য হন।
শরৎচন্দ্রের সাহিত্য সাধনার হাতেখড়ি হয় ভাগলপুরে। তার অনেক বিখ্যাত গল্প এখানে লেখা। যেমন- চন্দ্রনাথ, দেবদাস। তিনি প্রথম জীবনে সন্ন্যাস ব্রত নিয়ে ভারতবর্ষে ভ্রমণ করেন। পরে পেশাগত কারণে অনেক বছর বার্মায় ছিলেন। কলকাতা থেকে বার্মা যাওয়ার কালে তিনি ‘মন্দির’ গল্পটি কুন্তলীন পুরস্কারের জন্য দাখিল করেন। গল্পটি প্রথম পুরস্কার পায় ও কুন্তলীন পুস্তিকামালায় প্রকাশিত হয়। বার্মায় লেখা ‘বড়দিদি’ গল্পটি ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে তার লেখা নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হতে থাকে। তিনি ইংরেজি উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কিছু উপন্যাসও লিখেছিলেন। এ সব উপন্যাসের মধ্যে দত্তা ও দেনা পাওনা উল্লেখযোগ্য।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রকাশিত লেখালেখির মধ্যে রয়েছে— উপন্যাস : বড়দিদি, বিরাজবৌ, পরিণীতা, বৈকুন্ঠের উইল, পল্লীসমাজ, চন্দ্রনাথ, অরক্ষণীয়া, পণ্ডিতমশাই, দেবদাস, চরিত্রহীন, শ্রীকান্ত, নিষ্কৃতি, দত্তা, গৃহদাহ, বামুনের মেয়ে, দেনা পাওনা, নববিধান, পথের দাবী, শেষ প্রশ্ন, বিপ্রদাস, শুভদা ও শেষের পরিচয়। নাটক : ষোড়শী, রমা, বিরাজ বৌ ও বিজয়া। গল্প : রামের সুমতি, বিন্দুর ছেলে, পথ-নির্দেশ, মেজদিদি, আধাঁরে আলো, দর্পচূর্ণ, কাশীনাথ, ছবি, বিলাসী, মামলার ফল, হরিলক্ষী, মহেশ, অভাগীর স্বর্গ, অনুরাধা, সতী ও পরেশ। প্রবন্ধ : নারীর মূল্য, তরুণের বিদ্রোহ, স্বদেশ ও সাহিত্য, স্বরাজ সাধনায় নারী, শিক্ষার বিরোধ, স্মৃতিকথা, অভিনন্দন, ভবিষ্যৎ বঙ্গ-সাহিত্য, গুরু-শিষ্য সংবাদ, সাহিত্য ও নীতি, সাহিত্যে আর্ট ও দুর্নীতি এবং ভারতীয় উচ্চ সঙ্গীত। শরৎচন্দ্রের উপন্যাস ও গল্প অবলম্বনে ভারতীয় উপমহাদেশে ৫০টির মতো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে দেবদাস অবলম্বনে বাংলা, হিন্দি ও তেলেগু ভাষায় আটবার চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়।
শরৎচন্দ্র রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে দেশবন্ধুর আহ্বানে কংগ্রেসে যোগ দেন। তিনি ১৯২১-১৯৩৬ সাল পর্যন্ত হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ১৯২২ সালে সভাপতির পদ ত্যাগ করতে চাইলে দেশবন্ধু তা করতে দেননি। এ ছাড়া সশস্ত্র সংগ্রামী বা সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। বহু বিপ্লবীকে রিভলবার, বন্দুকের গুলি ও টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন। সূর্য সেনকেও তিনি অর্থ সাহায্য করেছিলেন।
১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শরৎচন্দ্রকে ডিলিট উপাধি দেয়। এর আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে জগত্তারিণী পদক দেয়। এ ছাড়া তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।