সাংবিধানিক অধিকার বঞ্চিত খালেদা জিয়া
গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ে গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে ‘অবরুদ্ধ’ আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তিনি অবরুদ্ধ নন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বার বার ‘খালেদা জিয়া মুক্ত, ইচ্ছে করলে বাসায় যেতে পারেন’ বললেও গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে সরানো হয়নি পুলিশি ব্যারিকেড। সময়ের ব্যবধানে সেখানে কমছে-বাড়ছে ইট বালু আর পুলিশ ভ্যানের সংখ্যা।
জরুরি অবস্থা ব্যতীত দেশের কোনো নাগরিককে এভাবে অবরুদ্ধ করে রাখার নিয়ম নেই বলে অভিমত সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীদের।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এভাবে একজন সম্মানীয় নাগরিককে অবরুদ্ধ করে রাখাকে কেউ সমর্থন করতে পারে না। সমর্থন করা যায় না।
সর্বশেষ শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে থাকা দ্য রিপোর্টের এ প্রতিবেদক জানান, কার্যালয়টির দুই পাশের রাস্তাতেই আড়াআড়িভাবে পুলিশের গাড়ি রাখা আছে। মূল ফটকের সামনে দুই সারি পুলিশ টহল দিচ্ছে পেছনের ফটকে তালা দেওয়া হয়েছে।
কার্যালয়ের দক্ষিণ দিকের রাস্তায় একটি জলকামান এবং উত্তর দিকে পুলিশের দুটি ভ্যান আড়াআড়িভাবে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও দুই পাশের রাস্তার মাথায় বাঁশ দিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ।
সাবেক মন্ত্রী ও রাজনীতি বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলীর অভিমত, ‘একটি বৃহৎ দলের নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা বিরাট আঘাত। যা দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য অশনি সঙ্কেত।’
সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে নাগরিকের চলাফেরার স্বাধীনতার বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশে অবাধ চলাফেরা, ইহার যে কোনো স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’
সর্বোচ্চ আইন দ্বারা একজন নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত থাকলেও তিনি যদি অধিকার ভোগ না করতে পারেন তাহলে সেই অধিকারের কোনো মূল্য থাকে না বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘মিডিয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ যা দেখছেন তা নিয়ে লুকোচুরি করার কোনো মানে নেই। এতে দায়িত্বশীলদের গ্রহণযোগ্যতা কমে।’
রাজধানীতে গত ৫ জানুয়ারি সমাবেশ ডাক দেওয়াকে কেন্দ্র করে ৩ জানুয়ারি রাত ১১টার পর থেকে খালেদা জিয়াকে ‘অবরুদ্ধ’ করে রেখেছে পুলিশ।
সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে সমাবেশের স্বাধীনতার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’
খালেদাকে ‘অবরুদ্ধ’ রাখার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, ‘অবৈধ সরকার নিজেদের করা আইনও মানছে না। তাদের আচরণ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মতো। তাই সবাইকে আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায় করে নিতে হবে।’
৩৮ অনুচ্ছেদে সংগঠনের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সংবিধান বলছে, ‘জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তবে এক্ষেত্রে সংবিধান পরিপন্থী কোনো কার্যক্রম প্রযোজ্য নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে তার মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। একইভাবে তার দলকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। এগুলো সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে আর কোনো জায়গা থাকে না।’
এ দিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদোজ্জা চৌধুরী শুক্রবার সাংবাদিকদের কাছে দেশের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে ‘অশনি সঙ্কেতের’ ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আলোচনার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।