সংলাপের ব্যবস্থা করুন : বিএনপি
সংলাপের জন্য ক্ষমতাসীনদের প্রতি আবারও আহবান জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে যতক্ষণ না বিজয় অর্জিত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
দলের সহ দফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি সই করা এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এ সব কথা বলেন।
বিবৃতিতে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। ক্ষমতায় গেলে কারো প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ করবে না। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়া ও একটি অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্যই আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে লাগাতার এই আন্দোলনে রত আছি।’
তিনি বলেন, ‘এই অবৈধ সরকার এখন খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। আবারও আহ্বান জানাচ্ছি, একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে এই মুহূর্তে কার্যকর সংলাপের ব্যবস্থা করুন। উৎপীড়ন, পরিকল্পিত নাশকতা, প্রকাশ্য গুলি করে অবরোধকারীদের হত্যা আর ধরপাকড়ের পথ থেকে সরে আসুন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত না বিজয় অর্জিত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
রিজভী বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলেন, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার তথা বাক, সমাবেশ, চলাচলের স্বাধীনতা ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনকে দমাতে বর্তমান অবৈধ সরকার জনগণের টাকায় পরিচালিত বিভিন্ন সরকারী বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
বিজিবির মহাপরিচালক ‘প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে বিজিবি’ বলে যে হুমকি দিয়েছেন সেটি নজিরবিহীন, অমানবিক ও আতঙ্কজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের লোক বসিয়ে এ সমস্ত বাহিনীগুলোকে গণশত্রুতে পরিণত করা হয়েছে। বিজিবির দায়িত্ব সীমান্ত পাহারা দেয়া। প্রায় প্রতিদিনই আমাদের দেশের লোককে সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ফেলানীর লাশ যখন কাঁটাতারের ওপর ঝোলে তখন এ ধরনের মহাপরিচালকরা নিশ্চুপ থাকেন। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে এরা দ্রুত তৎপরতা দেখায়।’
যৌথবাহিনীর নামে গ্রামেগঞ্জে নিরীহ জনগণের ওপর চালানো হচ্ছে আক্রমণ এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী মানুষ হত্যার নির্দেশনা নিয়ে চলমান আন্দোলনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। ১৯৭২-৭৫ এর রক্ষীবাহিনীর প্রেতাত্মা নিয়ে এই যৌথবাহিনী গ্রামেগঞ্জে বীভৎস তাণ্ডব চালাচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ-কানসাটের কয়েকটি গ্রামে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, বাড়িঘর ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এই পৈশাচিক তাণ্ডব চলছে শিবগঞ্জ-কানসাটসহ সারা বাংলাদেশে। বাপকে ধরতে গিয়ে তাকে না পেয়ে ছেলেকে কিংবা ছেলেকে ধরতে গিয়ে তাকে না পেয়ে পিতাকে অথবা ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরিবারের মা-বোনদের সাথে করা হচ্ছে ভয়ঙ্কর অসদাচরণ।’
বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে বারবার বলেছিলাম, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন আর জনগণের বাহিনী নয়, এটি দলীয় ক্যাডারে সাজানো আওয়ামী রক্ষাকারী বাহিনী, যদিও জনগণের টাকায় তারা বেতন পায়।’
তিনি বলেন, ‘শতকরা ৫ ভাগ ভোট নিয়ে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা এই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মসনদ থেকে অবতরণ করতে এত অনীহা কেন? কারণ এই ভোটারবিহীন সরকার এতই অনাচার করেছে যে, জনগণের ক্রোধের ভয়ে দলীয় লোকদের দিয়ে গঠিত আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর প্রহরায় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে। তাই সঙ্কট নিরসন করতে তারা ভয় পাচ্ছে। শান্তি, স্থিতি ও সুস্থির রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টিতে তারা অনাগ্রহী।এ কারণেই একটি স্বচ্ছ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে তারা ভয় পায়।