৫ জানুয়ারি দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন হতো অবরোধ সংবিধান পরিপন্থী : আইজিপি
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির কিছুটা নিষ্ক্রিয়তার কারণে আজ মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। তাদের উত্থান বড় ভয়ঙ্কর। জাতির জন্য হুমকি।’
‘অবরোধ মানবাধিকার ও সংবিধান পরিপন্থী’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মিঠাপুকুর, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ-এ তিনটি স্থান সন্ত্রাসী এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। যা এখানকার মানুষের জন্য লজ্জাজনক।’
পুলিশের আইজিপি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা এখানকার মহিলাদের সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করছে। মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুরের এই মিঠাপুকুর। এখানকার মহিলারা সন্ত্রাসী কাজে দোসর হলে আমাদের দুঃখ রাখার জায়গা থাকবে না।’ আইজিপি এ সময় নিজেদের বিবেক জাগ্রত করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
রংপুরের মিঠাপুকুর বালিকা বিদ্যালয় মাঠে শুক্রবার সকালে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অবরোধ মৌলিক কোনো অধিকার নয়। সংবিধান পরিপন্থী। প্রত্যেক নাগরিকের সমাবেশ করার বিধান রয়েছে, যারা একথা বলেন তারা আইন জানেন না। যুদ্ধাপরাধীদের প্ররোচনায় খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু এর খেসারত দেশের জনগণ কেন দেবে?’
আইজিপি বলেন, ‘টক শোগুলোতে বলা হচ্ছে, ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে দেওয়া হলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হতো না।’ টক শোতে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যদি সমাবেশ করতে দেওয়া হতো আর কোনো বিশৃঙ্খলা হতো, তখন এর দায়িত্ব কে নিত?’
তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্য মতে সেদিন সমাবেশ করতে দেওয়া হলে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়ত। পুলিশি নিষেধাজ্ঞার কারণে সরকারি দল ৫ জানুয়ারি সমাবেশ না করলেও দুই দুইবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ‘‘আমি সমাবেশ করবোই’’ বলে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তাদের কোনো ষড়যন্ত্র ছিল, তাই তারা জোর করে সমাবেশ করার পরিকল্পনা করেছিল।’
শহীদুল হক বলেন, ‘অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। রিজার্ভ বেড়ে গেছে।’ তিনি উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।’
মিঠাপুকুরে পুলিশের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুলিশের সংখ্যা কমিয়ে জনগণকে সজাগ করা হলে তারাই আইনশৃঙ্খলার কাজ করবে।’ তিনি এ সময় মিঠাপুকুরে একটি তদন্ত ক্যাম্প করার বিষয়ে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।
র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। নির্বাচন হলে জনগণ তাদের রায় দেবেন। কিন্তু বোমা মেরে, মানুষ পুড়িয়ে খুন করে, সম্পদ ধ্বংস করে গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধার করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে নিয়ে, দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ২০১৩ সালে একবার রুখে দিয়েছি, এবারও রুখে দেব।’
র্যাব প্রধান বলেন, ‘গত ১১ দিনে সারাদেশে ২৪ জন নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। যারা এ কাজ করে তারা সন্ত্রাসী। তারা টেরোরিস্ট। তারা দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় এখন বারশ ডলার ছুঁই ছুঁই করছে। আর দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা সম্ভব হবে যদি দেশের গণতন্ত্র সুস্থ রাখা যায়।’
বেনজীর আহমেদ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘দেশের জন্য হুমকি এমন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা যদি ঘুরে দাঁড়াই, তাহলেই তাদের নিশ্চিন্ন করা যাবে।’
রংপুরের জেলা প্রশাসক ফরিদ আহাম্মদের সভাপতিত্বে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবীর, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, মিঠাপুকুর উপজেলার চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টু, তোজাম্মেল হোসেন, নজরুল ইসলাম চাঁদ প্রমুখ এ সময় বক্তব্য রাখেন।
এর আগে, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র্যাব মহাপরিচালক অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহতদের পরিবারের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা এবং আহতদের পরিবারের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করেন।