অসময়ের এই বৃষ্টির পেছনে কারণ কী?
মাঘ মাসের শুরুতেই কেন ঢাকার আকাশ জুড়ে বৃষ্টিপাত? অসময়ের এই বৃষ্টির কারণ কি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ না অন্য কিছু?
সাধারণত প্রাকৃতিক নিয়মে শীতকালে বৃষ্টি হবার কথা না। তাই কোনোরকম পূর্বলক্ষণ ছাড়াই এই বৃষ্টি হওয়াকে অনেকেই ভাবছেন বিশ্বজুড়ে ক্লাইমেট চেঞ্জ অথবা গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর প্রভাব হিসেবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিকে বলা হয়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এক লঘুচাপের কারণে অসময়ের এই বৃষ্টি। কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান এক ফোনালাপে প্রিয়.কমকে জানান, লঘুচাপের ব্যাপারটি আসলে ঠিক নয়। ঢাকা ও ফরিদপুরের আকাশে এমন অসময়ের বৃষ্টি হবার পেছনে কারণ হলো মূলত গত কিছুদিনের উষ্ণ তাপমাত্রা। তাপামাত্রা বেশি থাকার কারণে স্থানীয়ভাবে বাষ্প একত্রিত হয়ে মেঘ তৈরি হয় ও বৃষ্টিপাত ঘটায়। তিনি জানান, এর পেছনে লঘুচাপ বা অন্য কোনো কারণ দায়ী নয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ সকালেও মেঘলা আবহাওয়া ছিলো ঢাকাসহ দেশের আরও কিছু স্থানে।
শুধু বৃষ্টিই নয় বরং এই বৃষ্টির সাথে সাথে দেশের তাপমাত্রায় যে অসামঞ্জস্য দেখা দিচ্ছে তাও অনেকের মনে তৈরি করছে প্রশ্ন। পৌষ মাসের শেষের দিকে সাধারণত আরও বেশি শীত পড়ে থাকে। কিন্তু চলতি মৌসুমে পৌষের শেষে বেশ আরামদায়ক তাপমাত্রা ছিলো চারিদিকে। তবে বৃষ্টিপাত হবার কারণে আবারও ঠাণ্ডা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি হতে পারে ক্লাইমেট চেঞ্জের একটি প্রভাব। বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা ক্লাইমেট চেঞ্জের ফল ইতোমধ্যেই ভোগ করছে বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম হয়ে পড়ছে আরও উষ্ণ, মৌসুমি বৃষ্টিপাত অনিয়মিত এবং অসময়ে দেখা দিচ্ছে বৃষ্টিপাত। বন্যা, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও অতিরিক্ত গরমের কারণে মানুষের অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুও ঘটতে দেখা যাচ্ছে।
IPCC এর Fourth Assessment Report (IPCC, 2007) অনুযায়ী বাংলাদেশের পরিবেশে দেখা যাচ্ছে নিম্নবর্ণিত পরিবর্তনগুলো:
– ১৯৮৫-১৯৯৮ পর্যায়ে দেখা যায় মে মাসে গড়ে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং নভেম্বর মাসে গড়ে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়
– ১৯৬০ সালের পর গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত বেড়ে যেতে দেখা যায়
– ২০০২, ২০০৩ এবং ২০০৪ সালে ঘন ঘন বন্যা হতে দেখা যায়
– ১৯৭০ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে সাইক্লোনের পরিমাণ কমে গেলেও এর তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়
– বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ এবং সাইক্লোন সৃষ্টি বেড়ে গেছে
– পরিবেশে পরিবর্তনের কারণে পানির সংকট আগের চাইতে বেশি বোঝা যাচ্ছে
– শুকনো মৌসুমে বঙ্গোপসাগরের লবণ তীরবর্তী এলাকায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভেতরে পৌঁছে গেছে
– সময়মত বৃষ্টিপাতের অভাব ও খরার কারণে বাস্তুসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
[সুত্র: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, Network on Climate Change, Bangladesh ,(NCC,B)]