খুনিদের সঙ্গে কেন আলোচনায় যাব : শেখ হাসিনা
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিসহ বিভিন্ন পক্ষের দেওয়া আলোচনা প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কেন আমি আলোচনায় যাব? আমার পিতা-মাতার হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল। বিএনপি সরকারের সময় আমার ওপরে বার বার হামলা হয়েছে। এই খুনিদের সঙ্গে কেন আলোচনায় যাব? একজন খুনির যেভাবে বিচার হয় তারও (খালেদা জিয়া) সেভাবে বিচার হবে। খুনিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়।’
মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ কেউ আছেন যারা আমাকে খুনির সঙ্গে এক পাল্লায় মাপতে চান। তাদেরকে বলতে চাই, খুনির সঙ্গে এক পাল্লায় মাপবেন না।’
তিনি বলেন, ‘২০ দলের বিষে দেশ জর্জরিত। তারা সাপ হয়ে দেশ ও দেশের মানুষকে দংশন করছে। এটাই নাকি তাদের আন্দোলন। এমন আন্দোলন আমরা কখনও দেখিনি। জনগণকে হত্যা করে গণতন্ত্র রক্ষা হয় কিভাবে? তাদের উদ্দেশ্য দুর্নীতি ও খুনের মামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করা। এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার মামলা মোকাবিলা করতে চান না তারা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু দেশবাসীর সমর্থন চাই। সংসদ সদস্যদের বলব, প্রত্যেকের এলকায় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি করে প্রতিরোধ করেন। কারা সমস্যা তৈরি করে তা বের করা খুব কঠিন কাজ নয়।’
বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের অবস্থান বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানেই মুসলমানরা আছে সেইখানেই অনেকে সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমরা দেশকে ভালো অবস্থায় রাখতে পেরেছি। আমি বেঁচে থাকতে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সমস্যা তৈরি হতে দেব না। আমাকে মেরে ফেলার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’
বিরোধী জোটের আন্দোলন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিন মজুর থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা কেউ রেহাই পাচ্ছে না তাদের হাত থেকে। আক্রমণ হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপরেও।’
বিএনপি মিথ্যাবাজের দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিজেরা পুড়িয়ে মারছেন, মিথ্যাচার করে বলেছেন আমরা নাকি পুড়িয়ে মেরেছি। আমার ওপর গ্রেনেড হামলার সময়ও তারা বলেছিল আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়েছিলাম। এই হলো তাদের মিথ্যাবাজির অবস্থা।’
আমেরিকার ছয় কংগ্রেসম্যানের বিবৃতি এবং বিজেপি প্রধানের টেলিফোন আন্তর্জাতিক মিথ্যাবাজি বলে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
উজিরপুরের এক ট্রাক শ্রমিকের পুড়ে যাওয়া লাশের ছবিসহ বেশ কয়েকটি ঘটনার ছবি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট হয় মানুষগুলোকে (পুড়ে যাওয়া) দেখলে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যতদূর সম্ভব। হাসপাতালে ডাক্তারদের আলাদাভাবে বলা আছে। যতদূর সম্ভব খরচসহ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমা ও ঈদ-এ মিলাদুন্নবীতেও তিনি (খালেদা জিয়া) মানুষকে কষ্ট দিয়েছেন। জিয়ার (জিয়াউর রহমান) জন্মদিনে বিএনপির প্রেস রিলিজে জিয়ার সম্পর্কে কোনো কিছুই লেখা নেই। এই হলো বর্তমান বিএনপি।’
পয়েন্ট অব অর্ডারে আরও বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, আবদুল মতিন খসরু, তারানা হালিম, ফজলে হোসেন বাদশা, শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার বিকেলে দশম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন শুরু হয়।