অনুমোদনহীন এনজিওকে সহায়তা : ইসলামী ব্যাংককে জরিমানা
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে অনুমোদন নেই এমন এনজিওকে (বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন) সহায়তার দায়ে ইসলামী ব্যাংককে দশ লাখ টাকা জরিমানা ও সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সাথে এই ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম থেকে পরিচালিত হয় বালাগঞ্জ ওসমানী নগর গরিব কল্যাণ ট্রাস্ট। এনজিওটি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের কোনো সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নেয়নি। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। অথচ ইসলামী ব্যাংকের সহায়তায় দেশে বিভিন্ন সময় অর্থ পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে ইসলামী ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে কোনো সদুত্তর পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য শাস্তিস্বরূপ ব্যাংকটিকে দশ লাখ টাকা জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই জরিমানা মওকুফের জন্য ইসলামী ব্যাংক গত ৩০ নভেম্বর চিঠির মাধ্যমে আবেদন করে। চিঠিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এক মাসের সময় চাওয়া হয়। কিন্ত সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে নির্দেশনা বহাল রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বালাগঞ্জ ওসমানী নগর গরিব কল্যাণ ট্রাস্ট নামের প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য কিংবা বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন কিংবা নিবন্ধন নেয়নি। ব্যাংকে হিসাবধারী প্রতিষ্ঠানের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের দলিলপত্র সংরক্ষণ করা হয়নি। এ ছাড়া হিসাবটি পরিচালনাকালে গ্রাহকের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণ না করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২৫(১)(ক) ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ কারণে একই আইনের ২৫(২)(ক) ধারার আওতায় ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ওপর দশ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা যথাযথ হয়েছে। তাই জরিমানা মওকুফের বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।
এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে ইসলামী ব্যাংক গত ২ ডিসেম্বর ১০ লাখ টাকা জমা দেয়। যার চেক নম্বর : গ ০০১০১১৫।
এই টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ্যাকাউন্টিং এন্ড বাজেটিং বিভাগে জমা দেওয়া হয়। যা সংশ্লিষ্ট বিভাগ এক চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে।
এই বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মান্নান বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছি। সরকারের কোষাগারে দশ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যতটা কঠোর হওয়া সম্ভব তা হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইসলামী ব্যাংক সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণ করেনি। যে গ্রাহকের কোনো অনুমোদন নেই, সেই গ্রাহক ২০০৮ সাল থেকে লেনদেন করে আসছে। এই কারণে ব্যাংকটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।