অবরোধ-হরতাল: পেট্রোল পাম্পে তেল বিক্রি কমেছে ৮০ ভাগ
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা টানা অবরোধে সারা দেশের পেট্রোল পাম্পগুলোতে গড়ে প্রায় ৮০ ভাগ তেল বিক্রি কমেছে। পাম্পগুলোতে জ্বালানী তেল ও সিএনজি (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) বিক্রি না হওয়ায় পাম্প মালিকদের যেন মাথায় হাত পড়েছে।অবরোধ-হরতালে রাজধানীর অভ্যন্তরের সিএনজি ও পেট্রোল পাম্পগুলোয় তেল ও সিএনজি বিক্রি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও ঢাকার বাইরের পাম্পগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
সারা দেশে তেল সরবরাহ নিয়ে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিপাকে পড়লেও বিজিবি ও পুলিশের সহায়তায় তা বর্তমানে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। তবে যানবাহন কম চলাচল করায় পাম্পে বিক্রি কমেছে। তাই পাম্পগুলোতে তেল-গ্যাসের চাহিদাও কমেছে।
বিপিসি চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে তেল উৎপাদন ও সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সড়কপথে বিশেষ স্কট দিয়ে তেল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। নিরবিচ্ছিন্ন তেল সরবরাহে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তেলের কোনো ঘাটতি এ মুহূর্তে নেই।’
সেচ মৌসুমে প্রান্তিক কৃষকের হাতে চাহিদা মোতাবেক তেল যাচ্ছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছি। হরতাল-অবরোধের অজুহাতে কেউ কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে।’
বিপিসির জিএম (মার্কেটিং) আবু হানিফ মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের ডিপোগুলোতে পর্যাপ্ত তেল মজুদ রয়েছে। বিজিবি ও পুলিশের সহায়তায় আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে তেল পৌঁছে দিচ্ছি। তেল সরবরাহে এখন কোনো সমস্যা নেই।’
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউশন, এজেন্ট এ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, ‘তিন থেকে চার দিন আগে তেল সরবরাহ অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল। বর্তমানে বিজিবি ও পুলিশের সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে তেল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে প্রায় পাঁচ হাজার তেলের পাম্প রয়েছে। গড়ে পাম্পগুলোতে তেল বিক্রি প্রায় ৮০ ভাগ কমে গেছে। তেলের সরবরাহ আছে, তবে বিক্রি নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নাটোর ও রাজশাহী এলাকায় তেল সরবরাহে বিঘ্ন হলেও ওইসব এলাকার পাম্পগুলোতে তেলের ঘাটতি নেই। ৩ জানুয়ারি থেকে তেল বিক্রি কমতে শুরু করেছে। যা বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে।’
সিএনজি পাম্প মালিকদের সংগঠন বিডি সিএনজি এ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মাসুদ খান বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে সারা দেশে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় হরতাল-অবরোধের তেমন কুফল না পড়লেও এর বাইরে হাইওয়ের পাশে অবস্থিত সিএনজি পাম্পগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। আমাদের এ ব্যবসা পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর রাজধানীর বাইরে তেমন গাড়ি চলাচল করছে না। ফলে রাজধানীর বাইরের সিএনজি পাম্পগুলোতে গ্যাসের চাহিদা একেবারেই কম।’
তিনি আরও বলেন, সারা দেশে ৫৮০টি সিএনজি পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে প্রায় ২০০টি সিএনজি পাম্প অবস্থিত। আর হাইওয়ের পাশে প্রায় ২০০টি সিএনজি পাম্প রয়েছে। ওই পাম্পগুলোতে সিএনজি বিক্রি প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। হরতাল-অবরোধে চলমান এ পরিস্থিতি আমাদের জন্য অত্যন্ত ভয়ানক ও নাজুক।
চট্টগ্রাম জোন, আশুলিয়া জোন, বাইপাইল জোন ও মানিকগঞ্জ জোনে স্বাভাবিক অবস্থাতেই গ্যাস সঙ্কট বেশী থাকে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বলে সিএনজি এ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা জানান।
ফাতেমা নাজ পেট্রোল পাম্প এ্যান্ড সিএনজি হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হক বলেন, ‘এ পাম্পে গড়ে ১২ থেকে ১৬ লাখ টাকার তেল বিক্রি হয়। গত তিন দিনে গড়ে তিন লাখ টাকার বেশী তেল বিক্রি হয়নি। মঙ্গলবার এ বিক্রির অবস্থা একটু ভাল হয়েছে। যানবাহন চলাচল কমে যাওয়ায় তেল বিক্রিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।’