প্রেমিককে দিয়ে পুলিশ অফিসার স্বামীকে খুন করলেন স্ত্রী
স্ত্রী পরকীয়া প্রেমে আকৃষ্ট হয়ে তার প্রেমিকের সহযোগিতায় পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীকে লোকজন দিয়ে কুপিয়ে মারত্মক জখম করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে তার পরিবারের।
‘খুন’ হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম আকরাম হোসেন। তিনি ঝিনাইদহ শহরতলী হামদহ এলাকার আবুল হোসেন ছেলে।আর পরকীয়ায় আকৃষ্ট ওই স্ত্রীর নাম বনানী বিনতে বশির। তিনি একই উপজেলার ভগবান নগর গ্রামে বশির উদ্দিনের মেয়ে।
এ ঘটনায় নিহত আকরামের বোন জান্নাত আরা পারভীন রিনি বাদী হয়ে ঝিনাইদহ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-শৈলকুপা পিটিশন ৮/১৫। তারিখ-২০/০১/২০১৫ ইং। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভগবান নগর গ্রামে বশির উদ্দিনের মেয়ে বনানী বিনতে বশিরের সঙ্গে ২০০৬ সালে ১৩ জানুয়ারি বিয়ে হয় পুলিশ অফিসার আকরামের। বিয়ের ২ বছর পর বনানী একটি কণ্যা সন্তান জন্ম দেন। এর পর থেকে আকরাম চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করেন। সন্তান হওয়ার পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। এক একপর্যায়ে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দিনের অধিকাংশ সময় বাড়ির বাইরে থাকার কারণে স্ত্রী বনানী খাতুন নিকট আত্মীয় সাদিমুল হক মুনের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন।
বিষয়টি জানাজানি হলে চাপের মুখে থাকে স্ত্রী বনানী। গোপনে মোবাইলে কথা বলা, স্বামীর অবর্তমানে লুকিয়ে প্রেমিক মুনের সাথে দেখা করতেন বনানী। এক পর্যায়ে বনানী আকরামকে অবহেলা ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতে থাকে। বনানীর পরিবারও এ পরকীয়ায় সহযোগিতা করে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু আকরাম একমাত্র শিশু কণ্যা আফরিনের কথা চিন্তা করে নিরবে সহ্য করতে থাকে। সংসারে চরম অশান্তি শুরু হলে এসআই আকরাম স্ত্রীকে খুশি করতে ঢাকার মগবাজারে একটি বাড়ি কিনে দেন এবং বিমানবন্দরের এসবি শাখায় চাকরির সুবাদে সেখানে বসবাস করতে থাকে।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাত ১১ টার দিকে মোটর সাইকেলযোগে যমুনা সেতু হয়ে বাড়ি ফেরার পথে শৈলকুপার বড়দাহ নামক স্থানে পৌঁছালে স্ত্রী বনানী বিনতে বশির ও স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক মুন ষড়যন্ত্র করে লোকজন নিয়ে তাকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
পরে স্থানীয়রা তাকে মারাত্মক যখম অবস্থায় উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত ডাক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসতাপালে রেফার্ড করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৩ জানুয়ারি তার মৃত্যু হলে স্ত্রী বনানী ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বামীর লাশ এলাকায় নিয়ে আসে এবং দাফনের চেষ্টা করে।
তার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে ঝিনাইদহ ও ঢাকার চিকিৎসরা জানিয়েছেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্ত্রী বনানী লাশ ফেলে রেখে কণ্যাকে নিয়ে পালিয়ে যায় এবং এখন পর্যন্ত গা ঢাকা দিয়ে আছেন। পরে গতকাল মঙ্গবার আকরামের বোন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে।
মামলার আসামিরা হলেন- পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার কাচারীপাড়া জামতলার এনামুল হকের ছেলে সাদিমুল হক মুন, স্ত্রী বনানী বিনতে বশির, বনানীর পিতা বশির উদ্দিন বাদশা ও মাতা সেলিনা খাতুন।