টানা অবরোধে শেরপুরের সবজি বাজারে ধস: কৃষকের মাথায় হাত
বিএনপির টানা অবরোধের কারণে রাজধানী ঢাকা থেকে পাইকাররা না আসায় শেরপুরের সবজি বাজারে ধস নেমেছে। ফলে সবজি উত্পাদনকারী কৃষকরা চরম আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে শেরপুরের হাট-বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, বেগুন, শিমসহ অধিকাংশ সবজিই পানির দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, শেরপুরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে শেরপুর জেলায় ৮ হাজার ৯শ ৬৫ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়। এরমধ্যে সবজির ভান্ডার হিসেবে খ্যাত শেরপুর সদর উপজেলাতেই চার হাজার ৯শ ৫৫ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় সবজির বাম্পার উত্পাদন হয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররা শেরপুরে এসে উত্পাদিত সবজির অধিকাংশই কৃষকের ক্ষেত বা স্থানীয় হাট-বাজার থেকে কিনে নিয়ে যান। এজন্য উত্পাদন মওসুমের শুরুতে কৃষকরা সবজির ন্যায্যমূল্যও পেয়েছিলেন।
কিন্তু প্রায় তিন সপ্তাহ যাবত বিএনপির টানা অবরোধের কারণে ট্রাকসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সবজি কিনতে ঢাকা থেকে পাইকাররাও আসছেন না। এতে শেরপুরের বাজারগুলোয় সবজির দামে ধস নেমেছে। পচে যাওয়ার আশংকায় কৃষকরা এখন অধিকাংশ সবজিই পানির দামে বিক্রি করছেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে শেরপুর জেলা সদরের পাইকারি হাট কুসুমহাটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, বেগুন, শিমসহ বিভিন্ন প্রকারের বিপুল পরিমাণ সবজি বাজারে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু পাইকারের অভাবে সেগুলো বিক্রি করতে পারছেন না। স্বল্পসংখ্যক স্থানীয় পাইকার বাজারে আনা সবজির দাম বলছেন তুলনামূলক খুবই কম।
এসময় শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের ঘিনাপাড়া গ্রামের কৃষক হারুনুর রশীদ (৫০) বলেন, এক বিঘা জমিতে ফুলকপি আবাদ করেছিলেন। এজন্য ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উত্পাদন ভাল হয়েছে। অবরোধের আগে ঢাকা থেকে পাইকাররা খেতে গিয়ে একশত কপি ৫শ টাকায় কিনেছেন। কিন্তু এখন পাইকাররা না আসায় ক্ষেত থেকে কপি বাজারে নিয়ে এসেছেন। স্থানীয় পাইকারদের কাছে একশত কপি মাত্র দেড়শত টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তাঁর অনেক ক্ষতি হবে বলে জানান।
সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ (৪৫) বলেন, ‘২৫ শতাংশ জমিতে বাঁধাকপি চাষ করছিলাম। আগে পাইকাররা ক্ষেত থাইক্যা একশ কপি ৮শ ট্যাহায় কিনতো। কিন্তু অহন পাইকাররা একশ কপির দাম একশ ট্যাহা বল্তাছে। এই দামে বেচলে আমার অনেক লোকসান হবো। কিন্তু না বেইচা কী করুম? বাড়িত ফিরত নিয়া গেলে ভ্যান ভাড়া দিমু কই থাইক্যা ?’
সদর উপজেলার আরেক কৃষক আব্দুর রশীদ (৫৫) বলেন, ৩৫ শতাংশ জমিতে তিনি বেগুন আবাদ করেছিলেন। মওসুমের শুরুতে একমণ বেগুন সাতশত টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু অবরোধের কারণে একমণ বেগুন মাত্র ৪শ ৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
কুসুমহাটি বাজারের স্থানীয় সবজি পাইকার উজ্জল মিয়া (২৫) বলেন, অবরোধের কারণে ঢাকা থেকে পাইকাররা আসছেন না। আবার সড়ক-মহাসড়কে নিরাপত্তাহীনতার আশংকায় তাঁরাও ঢাকায় সবজি পাঠাতে পারছেন না। তাই বাজারে সবজির দাম অনেক কমে গেছে। এতে কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তিনি সবজিসহ সকল কাঁচামাল বহনকারী যান অবরোধের আওতামুক্ত রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানান।
জানতে চাইলে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিবুল ইসলাম খান বলেন, পণ্যসহ সকল প্রকার যান চলাচলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা মহাসড়কে টহল জোরদার করেছে। ব্যবসায়ীরা এখন নির্বিঘেœ তাঁদের মালামাল ও পণ্য পরিবহন করতে পারবেন বলে তিনি জানান।