অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জামায়াতের
অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। একইসঙ্গে ২০ দলীয় জোট ঘোষিত ৩৬ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করায় দেশবাসীকে আন্তরিকভাবে মোবারকবাদও জানান তিনি।
এক বিবৃতিতে সোমবার সন্ধ্যায় শফিকুর রহমান এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘জালেম সরকার সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের বাঁচার অধিকার আদায়ের গণআন্দোলন দমন করার জন্য দেশের আইন, সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবৈধভাবে দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মতো ব্যবহার করে বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, গুম ও গণগ্রেফতার অভিযান চালিয়ে সারাদেশে নৈরাজ্যজনক অবস্থা সৃষ্টি করেছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাসীরাও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটিয়ে দেশকে সন্ত্রাসের চারণভূমিতে পরিণত করছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, গত ২৫ জানুয়ারি দুপুরে ফেনী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিমের ভাতিজা আজিম উদ্দিনকে সাতটি পেট্রোলবোমাসহ পুলিশ আটক করেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বাসে আগুন দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগে তিনজন সাধারণ ছাত্রকে ধরে পুলিশের হাতে দিয়ে পুলিশের সঙ্গে মিলে তাদের বেদমভাবে মারপিট করে। এ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, দেশে বর্তমানে বাসে পেট্রোলবোমা হামলা করে মানুষকে পুড়িয়ে মারা ও অগ্নিদগ্ধ করা এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাই জড়িত। সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার সমর্থক সংবাদপত্র ও মিডিয়া ২০ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
নড়াইলের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ঢাকার ছাত্রদল নেতাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ এনে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘কেউ গ্রেফতার হলেই তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও দেশবাসী গুলি করে হত্যার আতঙ্কে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত থাকেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য বার বার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু তাদের আহ্বান আমলে নেওয়া হয়নি। র্যাবের ডিজি যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে দেশবাসী বিস্মিত হয়েছে।’
তিনি দাবি করেন, সোমবারও হরতাল চলাকালে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে।
অপর এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান দলন-পীড়ন উপেক্ষা করে অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করায় সকল স্তরের নগরবাসীর প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে মহানগরী আমির বলেন, ‘সরকার গণআন্দোলনে দিশেহারা হয়ে এখন ষড়যন্ত্র ও দলন-পীড়নের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার ষড়যন্ত্র করছে। সারাদেশে আন্দোলনরত জনতার ওপর দলন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে অতীতের সকল নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতেই গোটা দেশকেই সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের জনপদ এবং কারাগারে পরিণত করেছে। কিন্তু জনগণ সরকারের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হতে দেবে না বরং যেকোনো মূল্যে রুখে দেবে।’
তিনি ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার ও আটক নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকরের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।’