স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন : সহিংসতায় যোগ দিচ্ছে চরমপন্থীরা
সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন সহসাই শেষ হচ্ছে না। বরং সহিংসতা যেকোনো সময় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে। এ সহিংসতাকে বেগবান করার লক্ষ্যে উত্তর-দক্ষিণ অঞ্চল থেকে চরমপন্থী ও একাধিক জঙ্গী সংগঠনের সদস্য যোগ দিচ্ছে। সহিংসতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ২ হাজার ২৯৬ জন নেতাকর্মী কাজ করছে।
এদিকে বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দেশের উত্তর-দক্ষিণ অঞ্চল থেকে মাছ ও সবজির ট্রাকে করে অস্ত্রের চালান ঢাকায় আনা হয়েছে বলে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান সহিংসতা প্রতিরোধ ও সরকারকে সজাগ করার জন্য এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চরমপন্থী ও জঙ্গী সংগঠনের কার্যক্রমের তথ্য সম্পৃক্ত ২২১ পৃষ্ঠার একটি বিশেষ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার লক্ষ্যে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ সদর দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে সরকারকে অবহতি করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির জন্য গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে পাঠানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা গোয়েন্দা প্রতিবেদনটির তথ্য অনুসারে, ‘সরকার পতনের জন্য চলমান সহিংসতা আরও বেগবান করা হবে। অবরোধের পর লাগাতার হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা করতে বিডিআর বিদ্রোহের পলাতক ও জামিনপ্রাপ্ত সদস্যদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দক্ষিণ অঞ্চল কেন্দ্রীক বিএনপির উচ্চপর্যায়ের এক নেতার মাধ্যমে চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় বেশ কয়েকজন চরমপন্থী সদস্যদের দেখা গেছে। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে কারওয়ান বাজার এলাকার ৩-৪টি ট্রাকে মাছ, সবজির সঙ্গে অস্ত্রের চালান এসেছে।’
‘সরকার পতনের মরণ কামড়’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পতনের আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপ শুরু করেছে। এবারের আন্দোলনের প্রধান টার্গেটে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। ঢাকাকে অবরোধ ও হরতালের সময় দেশের অন্য জেলাগুলোর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন রাখা। একই সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে জনমনে ও সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল করে রাখবে। প্রয়োজনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। এমনকি নিজ দলের জনপ্রিয় নেতাকে হত্যা করে কৌশলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে দেশের পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করতে চায় বিএনপি-জামায়াত জোট।
জঙ্গী সংগঠন সর্ম্পকে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার পতনের জন্য বিএনপি-জামায়াত দলীয় ক্যাডারদের থেকে বেশী জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদের ব্যবহার করছে। এ সব জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে জেএমবি, হুজিবি ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিম। এ সব সংগঠন ও চরমপন্থী সদস্যদের সাভার, কেরাণীগঞ্জ, আশুলিয়াসহ রাজধানী ঢাকার আশপাশের এলাকায় ভাড়া বাসায় রাখছে। সেখান থেকে তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে পেট্রোলবোমা হামলা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এ ছাড়াও আন্দোলনের পরিকল্পনাকারীর নেতৃত্বে রয়েছেন ২ হাজার ২৯৬ জন। এদের মধ্যে বিএনপির রয়েছেন ১ হাজার ৫৯৯ জন, জামায়াতের ৬৯৫ জন, এলডিপি, জাগপা, খেলাফত মজলিস ও বিজেপির একজন করে মোট চারজন এবং ইসলামী ঐক্য জোটের দুইজন।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সহিংসতা প্রায় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা সম্পর্কে আমাদের কাছে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। সে সব বিষয় মাথায় রেখে দেশবাসীর জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার কাজ চলছে।’ এ পরিস্থিতি অতিদ্রুত শেষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সরকার পতনের লক্ষ্যে চলমান সহিংসতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গোয়েন্দা সংস্থার একটি প্রতিবেদনের আদলে পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশীর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও সাভার, আশুলিয়া, কেরাণীগঞ্জসহ ঢাকার উপকণ্ঠ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
সহিংসতা প্রতিরোধ ও গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার সহিংসতা প্রতিবেদনের জন্য নিজস্ব তথ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন গোযেন্দা সংস্থার তথ্য আমাদের কাছে আছে। এ সব তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করছি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে, যে তথ্যগুলো সহিংসতার প্রতিরোধের জন্য বলা যাচ্ছে না।’ তবে অতিদ্রুত সহিংসতা প্রতিরোধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির এ পুলিশ কর্মকর্তা।