অঝর নয়নে ছেলেকে শেষবিদায়
অশ্রুসিক্ত অঝর নয়নে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে শেষবিদায় জানালেন মা খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে তিনটায় কোকোর কফিন আলিফ মেডিকেল সার্ভিসের এ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। এ সময় অফহোয়াইট রংয়ের শাড়ি পরিহিত খালেদা জিয়া অঝর নয়নে কাঁদছিলেন। বোন সেলিনা ইসলাম ও দুই ভাইয়ের বউ কানিজ ফাতেমা ও নাসরিন সাইদ তাকে ধরে রাখেন।
এর আগে, আরাফাত রহমান কোকোর লাশ বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে নিয়ে আসা হয়। কার্যালয়ের নিচতলায় আরাফাত রহমান কোকোর কফিন রাখা হয়। সেখানেই মা খালেদা জিয়া ছেলের মুখ শেষবারের মতো দেখেন। কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার নিজ অফিস কক্ষ থেকে তিনি সোয়া দুইটার দিকে নিচতলায় আসেন। সেখানে ছেলের লাশের পাশে আধাঘণ্টা অবস্থান করেন তিনি। পুরো সময়ই খালেদা জিয়ার চোখ ছিল অশ্রুসজল।
এর আগে, বিমানবন্দর থেকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সে করে কোকোর লাশ গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিমানবন্দরের গেট থেকে হাজার-হাজার নেতাকর্মী লাশবাহী গাড়িবহরের সঙ্গে যায়। গাড়িবহরে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের গাড়িসহ কয়েকশো মোটরসাইকেল ছিল।বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত রাস্তার দুদিকে কালোব্যাজ পরিহিত অবস্থায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার-হাজার নেতাকর্মীকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বিমানবন্দর ও গুলশানসহ পুরো রাস্তায় পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে।
এর আগে, মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। তার মামা শামীম এস্কান্দারসহ স্বজনরা মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকার পথে রওনা দেন।
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের (এমএইচ-১০২) ওই বিমানটিতে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান ঢাকায় এসে পৌঁছায়।
বিমানবন্দরে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ গ্রহণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস কাদের চৌধুরী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী।
গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবস্থান করছেন বোন সেলিনা ইসলাম, ভাই শামীম এস্কাদারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও সাইদ এস্কাদারের স্ত্রী নাসরিন সাইদসহ পরিবারের সদস্যরা। কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার সকাল থেকেই হাজার-হাজার নেতাকর্মী অবস্থান করছেন।
বিএনপি প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দীন দিদার দ্য রিপোর্টকে জানান, সামরিক কবরস্থানে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ দাফনের অনুমতি না পাওয়ায় বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় এক সংবাদ সম্মেলন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সেখানে পরিবারের সদস্যরা ছাড়া অন্য কেউ আসতে পারবে না। এর পর কোকোর লাশ বিকেল ৪টার মধ্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নেওয়া হবে। সেখানে বাদ আসর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য লাশ কিছুক্ষণ সেখানে রাখা হবে।’
নজরুল ইসলাম খান জানান, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে কোকোর লাশ সরাসরি বনানীর সামরিক কবরস্থানে নেওয়া হবে। সেখানে কোকোকে দাফনের জন্য ইতোমধ্যেই আমাদের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়েছে। কোকো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধানের সন্তান। আশা করি, তার দাফন সেখানে হবে।
কোকোর কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না দাবি করে নজরুল ইসলাম দলমত নির্বিশেষে সবাইকে বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের সর্বস্তরের মানুষকে তার জানাজায় শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
নজরুল ইসলাম খান বিএনপি ও কোকোর পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুতে দেশবাসী, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও যারা দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্নভাবে সমবেদনা ও শোক জানিয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এদিকে আরাফাত রহমান কোকোর প্রতি সম্মান জানাতে সোমবার থেকে বিএনপির তিন দিনের শোক শুরু হয়েছে। দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। নেতাকর্মীরা বুকে কালোব্যাজ ধারণ করেছেন। এ ছাড়া এই তিন দিন সারাদেশের মসজিদে মসজিদে কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিল হবে।
বাংলাদেশ সময় গত শনিবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় হার্ট এ্যাটাকে মারা যান।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে জাতীয় মসজিদ নাগারায় রবিবার দুপুরে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।