এরশাদের কনভেনশনে সাড়া নেই কোনো দলের
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘মানবসৃষ্ট মহাদুর্যোগ’ বলে কনভেনশন ডাকার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সকল নিবন্ধিত দলকে চিঠি দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, এরশাদ সকালে এক কথা, বিকেলে আরেক কথা বলায় তার এ কনভেনশনে আগ্রহ নেই তাদের।
জানা গেছে, খোদ এরশাদের শরিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও আগ্রহ নেই এ কনভেনশনে। জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চিঠি সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ।
ড. গোলাপ বলেন, ‘চিঠি আমি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছে দিয়েছি। এখন সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর।’
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উনার চিঠিতে আমাদের তেমন আগ্রহ নেই। তবে উনি যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা করেন, উনি কিছু বললে সেটা প্রধানমন্ত্রীকেই বলতে পারেন।’
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গত রবিবার থেকে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার জন্য কনভেনশনের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু এ চিঠিতে কবে কনভেশন করা হবে সে বিষয়টির উল্লেখ নেই।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এরশাদ একজন স্বৈরাচার। বর্তমানে রাজনৈতিক ভাঁড়। এরশাদ যতই নিজেকে প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা দাবি করে সংলাপের উদ্যোগ নিক না কেন, এ উদ্যোগ হালে পানি পাবে না। কারণ দেশের সবাই এরশাদের চরিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুমতি না হলে অন্য কারও উদ্যোগে সংলাপের চিঠি চালাচালিতে বর্তমান সঙ্কট উত্তরণের সম্ভাবনা কম। বরং প্রধানমন্ত্রীকেই সর্বদলীয় সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই বর্তমান সঙ্কটের সমাধান হতে পারে।’
বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে না এরশাদ সাহেবের এ সংলাপের উদ্যোগ সফল হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গেছে। বরং সরকারের পক্ষ থেকেই সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘এরশাদ সাহেব এ দেশের রাজনীতিতে একজন স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিত। তার এ সংলাপের উদ্যোগ সফল হবে না। তার ডাকে কেউ সাড়াও দেবে না।’
বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব আবদুর রউফ মান্নান বলেন, ‘এরশাদ তো প্রধানমন্ত্রীও না বিরোধী দলের নেতাও না। উনার কথায় কেউ সংলাপে সাড়া দেবে বলে মনে হয় না। বরং উনি ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে নাটক করায় দেশের আজ এই অবস্থা। এই মুহূর্তে সংলাপের উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারি বলেন, ‘এরশাদ এ দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি। তিনি বলেছিলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নিলে জনগণ তাকে থুথু দেবে। কিন্তু তিনি নিজেই এমপি হয়েছেন। তিনি বর্তমানে রাজনৈতিক জোকারে পরিণত হয়েছেন।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বর্তমান সঙ্কট নিরসনে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের মতো বিশ্বস্ত অবস্থায় এরশাদ সাহেব নেই। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে তিনি যে নাটক করেছেন, তারপর উনার উপর জনগণের আস্থা একেবারেই নেই। বর্তমান মন্ত্রিসভাতেও উনার দল রয়েছে আবার প্রধান বিরোধী দলও তার জাতীয় পার্টি। এমন আজব সরকার সারা পৃথিবীতে আমি দেখিনি।’
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এরশাদের মতো স্বৈরাচারের উদ্যোগে এ দেশের সঙ্কট উত্তরণ হবে না। বরং বর্তমান সংকট উত্তরণের জন্য জাতীয় সংলাপ জরুরি। এর উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘দেশের বর্তমান সঙ্কট মানবসৃষ্ট এক মহাদুর্যোগ। আমরাই প্রথম সংলাপের আহ্বান জানিয়ে সবাইকে চিঠি দিয়েছি। আমরা সহিংসতা চাই না। আমরা চাই সবাই আমাদের সংলাপের আহ্বানে সাড়া দিক।’