কোকোর জানাজায় লাখো মানুষ
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জানাজায় লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ১৩ মিনিটে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদের খতিব অধ্যাপক মাওলানা মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন আহমেদ।
জানাজায় বায়তুল মোকাররমের ভেতর ও বাইরেসহ মসজিদের উত্তর গেটের মূল রাস্তা পরিপূর্ণ হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় পার হয়ে যায় জানাজার কাতার। অন্যদিকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ দিক গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চ এবং বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ভেতর পর্যন্ত বিস্তৃত হয় কোকোর জানাজার নামাজ।
জানাজার আগে আরাফাত রহমান কোকোর ছোট মামা শামীম এস্কান্দার মসজিদের মাইকে কোকোর জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, কোকো যদি কোনো ভুলত্রুটি ও অন্যায় করে থাকে তাহলে আপনারা ক্ষমা করে দেবেন। কোকোর কাছে যদি কারো দেনা-পাওনা থাকে তাহলে আপনারা আমাদের জানাবেন। আমরা তা পরিশোধ করে দেব।
জানাজা শেষে কোকোর লাশ বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশে খোলা জায়গায় নিয়ে আসা হয়। মানুষের ব্যাপক চাপের কারণে শেষ পর্যন্ত সেখানে লাখ রাখা সম্ভব হয়নি। সেখান থেকে কোকোর রাখ বের করে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। এরপর দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানের দিকে।
সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি আরাফাত রহমান কোকোর জানাজায় অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, এমকে আনোয়ার, নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী, মোসাদ্দেক আলী ফালু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, এ্যাডভোকেট জয়নাল আবদীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক জয়নাল আবদিন ফারুক, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকনসহ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। এছাড়া ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক, মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, সহ-সভাপতি ডা. রফিকুল কবীর লাবু, ডা. আবদুল কুদ্দুস, আবদুস সালাম, প্রথম যুগ্ম মহাসচিব ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ও ডা. সাইফুল ইসলাম সেলিমসহ কয়েক হাজার চিকিৎসক।
এ ছাড়া বিকল্পধারার সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ জানাজায় অংশ নেন।
জোট নেতাদের মধ্যে এলডিপির সভাপতি কর্নেল অলি আহমেদ বীর বিক্রম, মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, কর্মপরিষদের সদস্য ডা. রেদোয়ান উল্লাহ শাহেদী, মজলিশে শূরা সদস্য এ্যাডভোকেট মশিউল আলম, ড. রেজাউল করিম ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মর্তুজা, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আব্দুল মোবিন, জাগপা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, বিজেপির আব্দুল মতিন সউদ, ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি, পিপলস লীগের গরিবে নেওয়াজ, মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান এইচএম কামনরুজ্জামান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতী মহিউদ্দিন ইকরাম।
এর আগে গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে আরাফাত রহমান কোকোর লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স বিকেল পৌনে ৩টার দিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উদ্দেশে রওনা দেয়। কোকোর লাশ বায়তুল মোকাররমে পৌঁছে বিকেল পৌনে ৪টায়।
কোকোর মামা শামীম এস্কান্দারসহ স্বজনরা মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকার পথে রওনা দেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। এরপর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আলিফ মেডিকেল সার্ভিসের লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সে করে কোকোরলাখ নিয়ে যাওয়া হয় গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের দিকে। দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে কোকোর লাশ এসে পৌঁছায়। সেখানেই দুপুর সোয়া ২টায় মা খালেদা জিয়া শেষবারের মতো ছেলের মুখ দেখেন। এর পর স্বজনরা তার লাশে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
গত শনিবার (২৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় হার্ট এ্যাটাকে মারা যান।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে জাতীয় মসজিদ নাগারায় রবিবার দুপুরে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।