সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে কলেজ ছাত্রীকে পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ; আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, গুলিবর্ষণ : আটক ৫
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে একটি হত্যা মামলার সন্দেহভাজন এক কলেজ ছাত্রীকে ৬ দিন ধরে থানায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার সকালে তাকে সিরাজগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করলে আইনজীবীরা নির্যাতনের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এ সময় আদালত নির্যাতিতা কলেজ ছাত্রীর ১৬৪ ধারায় জবনবন্দি গ্রহণের নির্দেশ দেন। বিকেলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণকালে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষিপ্ত লোকজনের হাতে কাজীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ২ পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত হন। এ সময় পুলিশ ৭ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে আটক করেছে।
অভিযুক্ত কলেজ ছাত্রী শাপলা খাতুনের পরিবার এবং আদালত সূত্রে জানা যায়, একটি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামির সাথে মোবাইল ফোনের কথোপকথনের সূত্র ধরে গত ২১ জানুয়ারি পুলিশ শাপলা খাতুনকে আটক করে। শাপলা ও তার পরিবার অভিযোগ করে জানান, আটকের পর থেকেই তাকে কাজীপুর থানায় এনে অমানষিক নির্যাতন চালানো হয়। একই সাথে পুলিশ তার পরিবারের নিকট থেকে ১ লক্ষাধিক টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেছে। ৬ দিন পর সোমবার তাকে সিরাজগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার তাকে সিরাজগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক রুবিনা পারভিনের এজলাসে হাজির করা হলে এ নির্যাতনের বিষয়টি আদালতের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ে। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এক আদেশে শাপলা খাতুনের দুই হাতের দুই বাহুতে এবং কোমড় থেকে নিতম্ব পর্যন্ত কালচে জখমের দাগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। আদালত থানা হাজতে আসামির উপর নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আাইনানুগ ব্যবস্থা এবং তার সুচিকিৎসাসহ ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিযেছেন।
এদিকে আসামি শাপলা খাতুনকে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে, এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তার আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বেলা ২টায় সিরাজগঞ্জ আদালত চত্বরে কাজিপুর থানার ওসি আব্দুল জলিল ও ইন্সপেক্টার (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাকসহ ২ পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অন্তত ৭ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় পুলিশ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ৫ জনকে আটক করে।
এ বিষয়ে কাজীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন, হত্যার সাথে জড়িত থাকায় পুলিশ শাপলা খাতুনকে আটক করে। পরে তাকে সাথে নিয়ে অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান পরিচালনা করতেই তাকে থানা হেফাজতে রাখা হয়। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে আসামি শাপলা খাতুনের মোবাইল কল লিস্টের সূত্র ধরে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলা থেকে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ও মৃত আছিয়া খাতুনের স্বামী আলমগীরকে আটক করা হয়েছে। শাপলা খাতুনের উপর নির্যাতনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
সদর থানার ওসি হাবিবুল ইসলাম জানান, আদালতের ভেতর ঢুকে পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশ বাধ্য হয়ে ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এবিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) সুভাষ চন্দ্র সাহা জানান, আদালত চত্বরে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অনাকাঙ্খিত। গৃহবধু খুনের আসামি শাপলা খাতুনের বেশ কয়েকজন পরকীয়া প্রেমের নায়কের স্বজনরা এ ধরনের কাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে আসামি নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।