ভারতীয় পরিবেশ আদালতে নিষেধাজ্ঞা :নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও স্থলবন্দরের অচলাবস্থা
শেরপুরের নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও স্থবন্দর এখন প্রায় বন্ধের পথে। ভারতীয় পরিবেশবাদীদের দায়ের করা মামলায় বন্ধ রয়েছে ভারতীয় খনিতে কয়লা উত্তোলন। এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। আমদানী-রফতানিকারকরা পড়েছে লোকসানের মুখে। ফলে এ বন্দরে চলমান ২০ দলের অবরোধের কোন প্রভাব না পড়লেও প্রায় ২ হাজার শ্রমিক নিত্যদিন অভাবের মোকাবেলা করছেন। ২৮ জানুয়ারী বুধবার নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ভারতের আদালতে শুনানীর কথা রয়েছে।
ব্যাবসায়ী ও স্থলবন্দর সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের আমদানি-রফতানিকারীদের প্রতিবছর নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ব্যবসার আসল সময়। এসময় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু থেকে উত্তোলিত ৮০ থেকে ৯০ হাজার মেট্রিকটন খনিজ কয়লা আমদানি ও রফতানি করে থাকেন। পাশাপাশি কয়েক হাজার মেট্রিকটন বোল্ডার পাথরও আমদানি করা হয়। বছরের বাকি সময় বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এ বন্দরে দেড় হাজার নিয়মিত ও প্রায় ৩ হাজার অনিয়মিত শ্রমিক কাজ করে তাদের জিবীকা নির্বাহ করেন। এতে প্রতি বছর ব্যাবসীরাও লাভবান হন আর সরকারও পায় ১৬ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা রাজস্ব। কিন্তু চলতি অর্থ বছরে কয়লা আমদানি থেকে কোন রাজস্ব আয় হয়নি। তবে কয়লা আমদানি থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১ কোটি ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, বছরে প্রথম দিকে ভারতের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন শিলং এ অবস্থিত ভারতীয় পরিবশে আদালত ন্যাশনাল গ্রিনট্রাইব্যুনালে (এনজিটি) কয়লা উত্তোলন বন্ধে একটি রিট দায়ের করেন। এরই প্রেেিত ভারতের পরিবেশ বিষয়ক ওই আদালত অস্থায়ীভাবে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন ও স্থানান্তর করা বন্ধের নির্দেশ দেন। এছাড়াও আগে থেকে উত্তোলিত ১৫ হাজার মেট্রিকটন কয়লা রফতানি বা স্থানান্তরের েেত্রও শর্ত জুড়ে দেন। জানা গেছে, শর্তের মধ্যে ছিল ভারতীয় কয়লা রফতানিকারক ব্যাবসায়ীদের প থেকে সরকারের সমুদয় রয়েলিটি পরিশোধ করা ও উত্তোলিত অনলাইন ওয়েব্রিজের মাধ্যমে রফতানি তথা স্থানান্তর করা। এরপর ভারতীয় ব্যাবসায়ীরা সরকারের রয়েলিটি যথাযথভাবে পরিশোধ করলেও নাকুগাঁও বন্দরের অপজিটে ভারতীয় ডালুতে ওয়েব্রিজ না থাকায় আদালতের এই শর্ত ভারতীয় ব্যাবসায়ীরা পুরন করতে পারছেন না। ফলে বাংলাদেশের ব্যাবসায়ীরা এলসি করার পরও উত্তোলিত কয়লা ভারতীয় ব্যাবসায়ীরা রফতানি করতে পারছেন না।
এদিকে অল্প পরিমানে বোল্ডার পাথর আমদানি করা হলেও ভারতে নতুন করে আর পাথর উত্তোলন যাচ্ছেনা বলে সংশ্লিষ্টসুত্রগুলো জানিয়েছেন। এতে করে যেকোন মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে পাথর আমদানি। সুত্রে আরো জানা গেছে, আজ ২৮ ও আগামীকাল ২৯ জানুয়ারি শিলং এর আদালতে এসংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে শুনানির কথা রয়েছে। শুনানিতে যদি কয়লা উত্তোলনের অনুমতি মিলে তবে নাকুগাঁও স্থলবন্দরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে। লাভবান হবে সংশ্লিষ্ট সবাই। অন্যথায় এই বন্দরটি অচল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে মুহুর্তে এই বন্দরটি পুর্নাঙ্গবন্দরে রুপান্তরিত হয়ে ইতিমধ্যে অবকাঠামোগত অনেক কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঠিক সেই সময়ে ভারত সরকারের এমন সিদ্ধান্তে পথে বসতে চলেছেন দেড় শতাধিক ব্যাবসায়ী ও প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক। বন্দর শ্রমিক ইব্রাহিম (২৫), লাল মিয়া (৪৫), শফিক (৩৭)সহ অনেকেই জানান, এই বন্দর চালু হওয়ার পর থেকে মুটামুটিভাল ভাবেই তাদের সংসার চলছে। আমদানি রফতানিকারক ব্যাবসায় দেলুয়ার হোসেন রিপর ও ইলিয়াছ হোসেন জানান, আমরা ইটভাটার মালিকদের বাকিতে কয়লা দিয়ে পুজি বিনিয়োগ করি। তারা নতুন কয়লা নিয়ে পুরাতন পাওনা টাকা পরিশোধ করেন। এবছর নতুন কয়লা দিতে না পারায় বকেয়া টাকা তুলতে পারছিনা।
নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আমদানি রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল জানান, গত বছরের ২৯ নভেম্বর ব্যাবসায়ীদের প থেকে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভারতে সফর করে আসি। ভারতের আদালতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কয়লা আমদানির কোন সম্ভাবনাই দেখছিনা।
নাকুগাঁও শুল্কষ্টেশনের সাব ইন্সপেক্টার সামেদুল হক বলেন, ভারতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারনে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। শুনা যাচ্ছে পাথর আমদানিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে।