খালেদা জিয়ার দুঃখ প্রকাশ

khaবিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। কোকোর মৃত্যুর পর গুলশান কার্যালয়ে আসা রাজনৈতিক, সামাজিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে না পারায় তিনি দুঃখও প্রকাশ করেন।
চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। বুধবার রাতে গণমাধ্যমে এ বিবৃতি সরবরাহ করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি কোকোর জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই। দেশবাসীকে বলব, আমি আপনাদের মাঝে আছি এবং যতদিন বেঁচে আছি আপনাদের সঙ্গে থাকব ইনশাআল্লাহ।’
বিৃবতিতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কোকোর মৃত্যুর পর গুলশানকার্যালয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিদেশী কূটনীতিকরা আসেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে দেখা করেতে না পারায় আমি গভীরভাবে দুঃখিত। আমি আশা করি, পরিস্থিতি বিবেচনায় সকলেই বিষয়টিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় হার্ট এ্যাটাকে মারা যান। ওই দিন রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসনকে সমবেদনা জানাতে গুলশান কার্যালয়ে আসেন। কিন্তু ‘বিএনপি চেয়ারপারসনকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে, এখন তিনি দেখা করতে পারবেন না’ এমন অজুহাত দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
২৭ জানুয়ারি দুপুরে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ দেশে আসে। গুলশান কার্যালয়ে মায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটানোর পর মরদেহ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নেওয়া হয়। বাদ আসর সেখানে নামাজে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে কোকোর দাফন সম্পন্ন হয়।
আট বছর অসুস্থ সন্তানের মুখ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলাম
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমার এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক অকাল মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই মা হিসেবে আমি গভীরভাবে শোকাহত এবং মানসিকভাবে বিপর্যন্ত।’
তিনি বলেন, ‘অসুস্থ হয়ে প্রবাসে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেও সে চরম প্রতিহিংসামূলক বৈরিতা থেকে নিষ্কৃতি পায়নি। ভাগ্যের এমনই নিষ্ঠুর পরিহাস যে, মা হিসেবে আমি প্রায় আট বছর ধরে অসুস্থ সন্তানটির মুখ দেখার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত ছিলাম। অবশেষে আমাকে সন্তানের লাশ গ্রহণ করতে হলো। সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমি এর বিচারের ভার অর্পণ করলাম।’
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বীরমুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনীর প্রধান এবং রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের পুত্র হিসেবে আমাদের এই সন্তানটি একটি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেত্ত কখনও রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়নি। কেবল মাত্র সে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, শুধুমাত্র শহীদ জিয়া পরিবারের একজন সদস্য হবার কারণেই তাকে নানমুখী জুলুম-নির্যাতন, হেনস্তা-অপপ্রচারের শিকার হতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই গভীর বেদনা ও শোকের মুহূর্তে সকলের কাছ থেকে যে বিপুল সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সমবেদনা পেয়েছি তা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে।’
‘কুয়ালালামপুরে কোকোর প্রথম নামাজে জানাজায় অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢল নেমেছে আমি তার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। অন্যান্য দেশেও প্রবাসীদের বিপুল অংশগ্রহণে গায়েবানা জানাজার আয়োজনের জন্য আমি তাদেরকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
২০ দলীয় জোট নেত্রী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিএনপি, আমাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, ২০ দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সমাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে কোকোর বিদেহী রুহের মাগফিরাতের জন্য গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন যারা করেছেন আমি তাদেরকেও আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর জানাজার নামাজে দল-মত, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ শরীক হয়ে যে অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তাতে আমি গভীরভাবে অভিভূত। ধন্যবাদ প্রিয় দেশবাসীকে। জিয়া পরিবারের প্রতি গণমানুষের এই অপরিমেয় ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ আমাকে আরও একবার নতুন করে কৃতজ্ঞতার ঋণে আবদ্ধ করলো। বিপুল সংখ্যক মানুষের এই উপস্থিতিতে আমি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হলাম। শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি সঞ্চয়ে সর্বস্তরের দেশবাসীর এই অংশগ্রহণ আমাকে অনেক সাহায্য করবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের নেতৃবৃন্দের প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার এই দুঃখের সময়ে তারা শোকবার্তা পাঠিয়ে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন। আমি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা শোকবার্তা পাঠিয়ে এবং সশরীরে আমার কার্যালয়ে এসে সহানুভূতি জানিয়েছেন।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপি ও ২০ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-জোটের নেতাকর্মী, পেশাজীবী, নাগরিক সমাজের সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃকিত অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিত্ববর্গসহ নর-নারী, শ্রেণী-পেশা ও বয়স নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে আমি ধন্যবাদ দিচ্ছি ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা আমার কার্যালয়ে এসে শোক প্রকাশ ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন।’
‘তারা এ সময়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে না পারায় আমি গভীরভাবে দুঃখিত। আমি আশা করি পরিস্থিতির বিবেচনায় সকলেই বিষয়টিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’
‘আমি কোকোর জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই। দেশবাসীকে বলবো, আমি আপনাদের মাঝে আছি এবং যতদিন বেঁচে আছি আপনাদের সঙ্গেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।’

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend