‘নিজেদের মর্যাদা বাড়িয়ে রায় দেওয়া সমীচীন নয়’
রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের দেওয়া রায় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নিজেদের মর্যাদা নিজেরা বাড়িয়ে রায় দেওয়া কোনোমতেই সমীচীন নয়। এ ধরনের রায় পক্ষপাতদুষ্টের (পার্টিজান) ভূমিকা হয়ে যায়।’
দশম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে বুধবার বিকেলে জাতীয় পার্টির সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে সংসদ নেতা এ কথা বলেন।
গত ৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিদের পদমর্যাদা নিরূপণের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (১৯৮৬) অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের রায়ের পর রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান জানান, প্রধান বিচারপতি ও জাতীয় সংসদের স্পিকার একই অবস্থানে থাকবেন। আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ মন্ত্রীদের পদমর্যাদার হবেন। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার হবেন। এ্যাটর্নি জেনারেল সচিবদের উপরে থাকবেন। সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান ও মুখ্য সচিবরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের উপরে থাকবেন। অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল সচিবের পদমর্যাদার হবেন। জুডিশিয়াল সার্ভিসের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে জেলা ও দায়রা জজরা সচিবের পদমর্যাদার হবেন।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগের এই সিদ্ধান্তের ফলে একটি চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টির উপক্রম হয়েছে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে একটা নিয়ম-নীতি আছে। আমাদের সংবিধানে বলা আছে, সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আইনসভা, বিচার বিভাগ ও প্রশাসন—এই তিনটি হচ্ছে স্তম্ভ। এই তিনটি স্তম্ভের সমন্বয়ে সবকিছু চলবে।’
তিনি বলেন, ‘আমার অবাক লাগে, সংবিধানে সুনির্দিষ্টভাবে রয়েছে—কার কোথায় কী অবস্থান হবে। এখানে যার যার নিজের মর্যাদা নিজে দেওয়া, নিজের পক্ষে নিজের রায় দেওয়া, এটা তো সমীচীন নয়। এটা তো পার্টিজান রোল হয়ে যায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এভাবে নিজের পক্ষে ঘোষণা কখনো কোনো আদালতের রায়ে দেওয়া যায় না। এ রকম হলে যে যেখানে আছে যার যার মত করে সুযোগ নেবে। কোনো শৃঙ্খলাই থাকবে না।’
উচ্চ আদালতের রায় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জেলা জজের মর্যাদা যদি সচিব মর্যাদার হয় তাহলে উচ্চ আদালতে যারা আছেন তারা কোন মর্যাদায় যাবেন? যেতে যেতে তো মনে হয় তারা রাষ্ট্রপতির উপরেই চলে যাবেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্ন দেশ নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ কিভাবে চলে সেটা আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে যার যার দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিচার বিভাগ তার দায়িত্ব পালন করবে। সকলের সঙ্গে একটি সমন্বয় থাকতে হবে। তাহলেই রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে। সেই জায়গাটা যদি নষ্ট করা হয়। উচ্চ আদালত থেকেই যদি এটা আসে, তাহলে সেটা দুঃখজনক।’
বিষয়টির সুরাহায় সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, ‘এটা নিয়ে আইনমন্ত্রী আলাপ-আলোচনা করছেন। সমস্যাটা কিভাবে সমাধান করা যায় তার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করি আমাদের বিচারক যারা আছেন তারাও বিষয়টি বুঝবেন। কোনো আদালতই নিজে নিজের প্রমোট করা বা কোনোভাবে লাভবান বা বেনিসফসিয়ারি করা সম্পূর্ণ এথিক্সের (নৈতিকতা) বাইরে।’