বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন ‘রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগ নিতে তৈরি হচ্ছে উগ্র মতবাদীরা’
বাংলাদেশের একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলছেন, দেশটির প্রধান দুই দলের সংঘাতের কারণে রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন উগ্রপন্থী মতবাদের দল রাজনীতির ‘মাঝমাঠে’ ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) মুনিরুজ্জামান বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, একটি সমাজে বিভিন্ন মতবাদ এবং রাজনৈতিক বিরোধীদলের যে জায়গা থাকা উচিত – সেই জায়গায় এখন বি-রাজনীতিকীকরণের একটা প্রক্রিয়া বা চেষ্টা হচ্ছে।
“এ কারণে একটা রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই শূন্যতার সুযোগে বিভিন্ন উগ্রপন্থী মতবাদ সেই জায়গাটা পূরণ করতে এগিয়ে আসছে এমন একটা লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি।”
এই সব শক্তি কারা তা ব্যাখ্যা করে মি মুনিরুজ্জামান বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন যে বিভিন্ন উগ্র মতবাদী, অতি-ডানপন্থী, ইসলামিস্ট র্যাডিক্যাল, বা এমনকি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও রাজনীতির মাঝমাঠ বা সেন্টার স্পেসে আসার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতো রাষ্ট্রের শক্তিপ্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরকারের নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে। এ জন্য একটা ‘ডিপ স্টেট’ বা ‘রাষ্ট্রের ভেতরে আরেকটা রাষ্ট্র’ তৈরি হচ্ছে।”
“এটা যখন হয় তখন রাজনৈতিক সমাধানের দিকে এগুনোর সব পথ আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে সেই ধরণের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি।”
বর্তমান পরিস্থিতি রাজনৈতিক দিক থেকেই শুধু নয় নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার দিক থেকেও উদ্বেগজনক বলেও মি. জামান উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “যে ভাবে সংঘাত সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে তার ওপর কারো একক নিয়ন্ত্রণ কারো হাতেই নেই। এ ধরণের সহিংসতাকে আবার নিয়ংন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা যে প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্যই বেশ দুরূহ হয়ে পড়ে।”
বাংলাদেশের প্রধান দলগুলোর মধ্যে যে তিক্ততার কারণে এই সংকট – তা তৈরি হলো কেন, এ প্রশ্নের জবাবে মি মুনিরুজ্জামান বলেন, এর কারণ রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে যারা – তাদের একের সাথে অপরের যোগাযোগ নেই।
“বাংলাদেশের রাজনীতি যেহেতু শীর্ষ পর্যায় থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই তিক্ততা বাড়লে এ ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। যোগাযোগ হবার কোন সম্ভাবনাও আমরা দেখতে পাচ্ছি না।”
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে এক বছরের মাথায় যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তার সমাধান কি?
এর জবাবে মি. জামান বলেন, সমাধান হচ্ছে সংলাপ। “গুলি দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যা বন্ধ করা যায় না। আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান করতে হবে।”