অন্যের স্ত্রী অপহরণের দায়ে হরিণাকুন্ডু ওসিসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের
জাহিদুর রহমান, ঝিনাইদহ:- ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল কবীর ও উপ পরিদর্শক ফারুক হোসেনসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অন্যের স্ত্রী অপহরণের দায়ে মামলা হয়েছে। বুধবার হরিণাকুন্ডু উপজেলার আড়–য়াকান্দি গ্রামের আব্দার হোসেনের ছেলে তানভীর আহম্মেদ বাদী হয়ে ঝিনাইদহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক হেলাল উদ্দীনের আদালতে মামলাটি করেন। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন, হরিণাকুন্ডু উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের আব্দুর রউফ, আড়–য়াকান্দি গ্রামের নোমান, তোলা গ্রামের বাচ্চু ও অজ্ঞাতনামা তিন পুলিশ। বিজ্ঞ আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে ঝিনাইদহের সহকারী পুলিশ সুপার সদর সার্কেলকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদী তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাদী হরিণাকন্ডু উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে রোকসানাকে তিন লাখ টাকার দেন মোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করে আসছিলেন। বিয়ের পর বাদী তার স্ত্রীকে নিয়ে গত রোববার (২৫ জানুয়ারী ২০১৫) নিকটাত্মীয় রফিকুল ইসলামের বাড়িতে বেড়াতে যান। এরপর আসামীরা পরস্পরের যোগসাজসে বাদীর স্ত্রী রোকসানাকে জোর পুর্বক অপহরণ করে নিয়ে আসে। বাধা দিলে তারা খুন জখমের ভয় দেখায়। বাদী তার অভিযোগ পত্রে আরো উল্লেখ করেছেন, প্রধান আসামী হরিণাকুন্ডু থানার ওসি আমার স্ত্রীকে অন্যজনের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য জোর করে অপহরণ করে এনে তিন নং আসামী আব্দুর রউফের কাছে হস্তান্তর করেন। এ বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকী দেন ওসি এরশাদুল কবির। অন্যদিকে বাদী তার স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য ঝিনাইদহের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০০ ধারায় আরেকটি মামলা করেন। এই মামলাটিও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত। ওসির বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান জানান, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর মামলার যথাযথ কার্যক্রম শুরু হবে।
উল্লেখ্য হরিণাকুন্ডু থানার ওসি এরশাদুল কবীর যোগদানের পর থেকেই গোপালগঞ্জের নাম ভাঙ্গিয়ে এহেন অপকর্ম নেই যা তিনি করছেন না। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে হরিণাকুন্ডু থানা আসামী কেনাবেচার হাট শীর্ষক খবর বের হয়েছে। তিনি গ্রামের অর্থবিত্তশালী মানুষকে বিএনপি জামায়াত সাজিয়ে আটক করে নিয়ে আসেন এবং টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন। এই বানিজ্যের কবল থেকে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও বাদ পড়েনি। আবুল হত্যার আসামীদের সঙ্গে পুলিশ সভা সমাবেশ করে বেড়ালেও হত্যা মামলার চেয়ে ভাংচুর মামলা নিয়ে পুলিশকে বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। গত ২২ ডিসেম্বর চাঞ্চল্যকর বিএনপি নেতা আবুল হোসেন হত্যা মামলার চার্জশীট আদালতে দাখিল করা হয়। এ মামলার এজাহার ভুক্ত ২৪ জন আসামীর মধ্যে আওয়ামীলীগের দুই নেতাসহ ১৭ জনকে বাদ দেয়া হয়। এজাহার বর্হিভুত দুইজনকে সংযুক্ত করে ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এস,আই গুলফাম ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসি এরশাদুল কবীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্ধ কোটি টাকা ঘুষ বানিজ্য করার অভিযোগ করেছেন মামলার বাদি নিহতের ছেলে সাইদুর রহমান পান্নু। হরিণাকুন্ডু উপজেলার কচুয়া গ্রামের রুবেল ও কল্লোল নামে দুই ভাইকে এখনো পুলিশ খুঁজছে। দেখা না করলে হত্যাসহ নানা হয়রানীমুলক মামলায় গ্রেফতার করার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এসআই ফারুক সাংবাদিকদের বলেছেন জামায়াতের ফান্ডে টাকা দেয়ার অভিযোগে তাদের খোজ হচ্ছে। চটকাবাড়িয়া গ্রামের স্বাধীনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার পরেও নারী নির্যাতনের মামলা দেয়া হয়েছে। ভবানীপুরের রাজ্জাক, জিয়া, গুড়পাড়ার আওলাদ, রায়পাড়ার আমীর হোসেন, আমতলার নজুরুল ইসলাম, ভেড়াখালীর জাহাঙ্গীরসহ অসংখ্য ব্যক্তিকে আটক করে অর্থ বাজিন্য করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে চাঁদপুর গ্রামের ফারুক হোসেন কুড়ি হাজার টাকা দিয়েও একমাস কারবরণ করেছে। এ ভাবে বাহাদুরপুর গ্রামের রেজাউল, হুমায়ন কবীর, তুহিন, মালিপাড়ার কোটন ও ফারুক, রহিমপুরের নাসির, একই গ্রামের আল আমিন, ভায়না গ্রামের রেজাউল করিমের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে ওসি ছাড়াও এসআই আলীম ও এসআই মনির জড়িত বলে ভুক্তভোগীরা জানান।