গোসলের সময় নড়ে উঠল ‘মৃত’ শিশু : তথ্য গোপন করছে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
শনিবার সকালে এক নবজাতককে মৃত ঘোষণা করলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। দিলেন মৃত্যু সনদও। এরপর দুপুরে আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের জন্য নিয়ে গেলে গোসলের সময় চিৎকার করে উঠল শিশুটি। পরিবার নবজাতককে নিয়ে ছুটলেন আবার হাসপাতালে।
মৃত ঘোষিত শিশু নড়ে উঠার ঘটনা বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করলেও এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছে না। এমনকি কোন ডাক্তার মৃত্যু সনদ দিয়েছে তার নামও প্রকাশ করা হচ্ছে না।
এ নিয়ে দুই মাসের মধ্যেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মৃত্যুসনদ দেওয়ার পর দু’জন বেঁচে উঠল। এর আগে ডিসেম্বরের ৪ তারিখ এক অজ্ঞাতপরিচয়ের বৃদ্ধাকে মৃত ঘোষণা করে মৃত্যুসনদ দেওয়ার পর সাড়ে তিন ঘণ্টা পর বেঁচে উঠেছিল। ওই ঘটনার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডাক্তারের নাম প্রকাশ করেনি। ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ওই ঘটনার পর একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনটি এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
দুই মাসের মধ্যে দু’টি ঘটনা ঘটায় এ হাসপাতালের চিকিৎসকদের দক্ষতা, দায়িত্বজ্ঞান এবং কর্তব্যপরায়ণতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নবজাতকের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রতিটি বাবা-মায়ের কাছে সন্তান অনেক প্রিয়। সেই সন্তানকে ডাক্তার কোন ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই মৃত ঘোষণা করল। দায়িত্ব জ্ঞানহীন ডাক্তারের কারণে প্রিয় সন্তানকে জীবিত কবর দিতে নিয়েছিলাম আমরা।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘জন্মের পর আমার সন্তান স্বাভাবিক ছিল না। এ কারণে ডাক্তার বলেছিল নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখার জন্য। কিন্তু তারা আমার সন্তানকে আইসিইউ খালি নেই বলে অন্য হাসপাতালে যেতে বলেন। এরপর আমরা বাধ্য হয়েই শিশু হাসপাতালে যাই। কিন্তু শিশু হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় রাতেই ফিরে আসি। এরপর সকালে ডাক্তার জীবিত সন্তানকে মৃত ঘোষণা করল।’ দায়ী ডাক্তারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দায়িত্বরত ডাক্তার মারাত্মক ভুল করেছে। এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।’
এর আগের ঘটনায় তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলেছিলেন, কিন্তু এখনো সেই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি বিষয়টি পরিচালককে জানানো হলে তিনি উত্তর দেননি।
শনিবারে নবজাতকের মৃত্যুসনদ দেওয়া ডাক্তারের নাম জানতে চাইলে তিনি তা প্রকাশ করেননি। তবে আশ্বাস দেন দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটে যোগাযোগ করা হলেও তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের প্রধান হাসপাতালের উপ-পরিচালক মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত কমিটি ডাক্তারের নাম খুঁজে বের করবে। আমরা ডাক্তারের নাম এখনো জানি না।’
এর আগের ঘটনাটির তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি।’
শুক্রবার রাতে জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী সুলতানা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এরপর সকালে তাকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করলেও দুপুরের দিকে ওই সন্তান নড়ে উঠে। শিশুটি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।