খালেদার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন : ভিন্নমত আ’লীগ ও জোটে
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করার সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের নেতা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকদের মধ্যেও ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। অনেক নেতাই বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি।
খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুতের সংযোগ শুক্রবার গভীর রাতে বিচ্ছিন্ন করে দেয় ডেসকো। শনিবার সকালে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় ডিশ ও ইন্টারনেট সংযোগ।
অবশ্য শনিবার রাত ১০টা ১২ মিনিটে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডেসকো) পাঁচজন কর্মচারী এসে বিদ্যুৎ লাইন স্বাভাবিক করেন। রাত ১০টা ১৭ মিনিটে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললে অনেক নেতাই সরকারের এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করেন। কেউ কেউ বলছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা যেতে পারত। খালেদা জিয়ার কার্যালয় ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সারাবিশ্বে সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো সহজ হবে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। যা আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক হবে না।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য একান্ত আলাপচারিতায় নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। আমরা যেখানে বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করছি। তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনছি। সেখানে এমন ঘটনা বিএনপির জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দেবে। সারাবিশ্বে দলের গ্রহণযোগ্যতা ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, আমরা তো আর সরকারে নেই। যারা সরকারে রয়েছেন তারা প্রধানমন্ত্রীকে কি পরামর্শ দিচ্ছেন এটা তারাই জানেন। আমার মনে হচ্ছে, সরকার এমন সিদ্ধান্ত না নিলেই ভালো হতো। বরং খালেদার বিরুদ্ধে আইনানুগ সিদ্ধান্ত নিলেই জনসমর্থন পাওয়া যেত।
একই দাবি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের। তারাও সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে মনে করছেন।
১৪ দলের একজন শীর্ষ নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আমাদের সর্বশেষ বৈঠকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। নাশকতাকারীদের ধরার জন্য পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছিলাম। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছি। কিন্তু সমাবেশের সিদ্ধান্ত ছাড়া অন্যকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এই মুহূর্তে খালেদার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, ডিশ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনা আমাদের জন্য সুখকর সিদ্ধান্ত হল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বামপন্থী একজন নেতা বলেন, ‘কার সিদ্ধান্তে কি হচ্ছে কিছুই জানি না। সরকার কারা চালাচ্ছে তাও জানি না। আমরা শুধু বৈঠকে যাই আর ব্রিফিং এ পাশে বসে থাকি। এর বাইরে কোনো কাজ নেই।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে কি হয়েছে আমি কিছুই জানি না। জানলে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারতাম।’
একই কথা বলেন আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আমাদের যা করণীয় আমরা তাই করব। তবে গুলশানে কি হয়েছে তা আমি বিস্তারিত জানি না। জানলে জানাতে পারতাম।’
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমি এখনো এই বিষয়ে কিছু শুনিনি।’
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ‘আমার কোনো মন্তব্য নেই। সিনিয়র নেতারা যা বলেন সেটাই আমার মন্তব্য।’