‘সরকার মার্শাল ডেমোক্রেসি প্রবর্তন করেছে’ সালাহ উদ্দিন আহমেদ
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা গদি রক্ষার জন্য এবং অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার মানসে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছেন। দেশে গণতন্ত্রের নামে সরকার মার্শাল ডেমোক্রেসি প্রবর্তন করেছে। বর্তমানে দেশে একদলীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েমের পর একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করার মানসে এক ব্যক্তির ইচ্ছাকেই আইনের উৎসে পরিণত করা হচ্ছে।’
শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ সব কথা বলেন।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক সকল অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সভা-সমাবেশ ও কথা বলার অধিকার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’
যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘দেশের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অবরুদ্ধ করা হয়েছে দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। বস্তুত সারা দেশের জনগণই আজ অবরুদ্ধ এবং বাংলাদেশ নামের এই জনপদ বিশাল এক কারাগারে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল গভীর রাতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আবাসস্থল দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়কে জনসভায় ঘোষণা দিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড ও ক্যাবল লাইনসহ সকল বৈদ্যুতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সরকারি দল ঘোষণা দিয়েছে পানি, গ্যাস ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে এ রকম ঘৃণিত ও জঘন্য নজির কোথাও পাওয়া যাবে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসহ সকল যোগাযোগ মাধ্যম পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল দফতরকে আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সরকার দায়ী থাকবে এবং এর পরিণতি কখনই শুভ হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেশের ও বিশ্বের সকল মানবাধিকার সংস্থা, সংগঠন ও মানবাধিকারকর্মীদের কাছে আহ্বান জানাই, আপনারা আসুন, দেখুন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে কত ঘৃণ্য জংলীতন্ত্র কার্যকর হয়েছে ভোটারবিহীন এই সরকারের বদৌলতে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কাছে আবেদন জানাই, আপনারা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অনুধাবন করে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’
সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘গত রাতে বিএনপির সংগ্রামী যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে সরকারি পেটোয়াবাহিনী র্যাব গ্রেফতার করেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সময়ের সাহসী পুরুষ সংগ্রামী জননেতা রুহুল কবির রিজভীর গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। একই সঙ্গে ইতঃপূর্বে সারাদেশ থেকে গ্রেফতার হওয়া বিএনপি ও জোটের সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। চলমান আন্দোলনে সরকারি পেটোয়াবাহিনীর হাতে নিহত শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তাদের শোকাহত পরিবার পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
তিনি বলেন, ‘দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী, সরকারি পেটোয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে গ্রেফতার নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বৈধ আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না।’
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী জনগণের আন্দোলনের দাবানল দাউদাউ করে জ্বলে উঠবে আরও তীব্র গতিতে। দেশের সকল মুক্তিকামী মানুষের বাড়িঘরকে এখন আন্দোলনের সূতিকাগারে পরিণত করার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রত্যেক ঘরে ঘরে গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলন গড়ে তুলুন।’
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট, দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও জোট, বরেণ্য নাগরিকবৃন্দ, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সাংবাদিক বন্ধুগণসহ সকল গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী জনগণের প্রতি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আহ্বান জানাই, অবরুদ্ধ ও বিলুপ্তপ্রায় গণতন্ত্রের মুক্তির দাবিতে মৌলিক, মানবাধিকার ও আইনের শাসন এবং ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যান।’