‘গুলি করে কয়জনকে মারবেন?’ ড. কামাল
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে গণফোরামের সভাপতি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘গুলি করে পেট্রোল বোমা বন্ধ করা যাবে না। গুলি করার নির্দেশ দিয়ে আপনি কয়জনকে মারবেন? গুলি করে কোনোদিন আন্দোলন বন্ধ করা যায়নি, যাবেও না।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে শনিবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
‘লাখো শ্রমিকের বুক ফাটা কান্না’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন।
সরকারকে উদ্দেশ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সরকারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বলতে হবে এটা আইয়ুবের, এরশাদের স্বৈরতন্ত্রের দেশ নয়, এটা জনগণের দেশ। এ জন্য সরকারকে আইয়ুব, এরশাদের মতো স্বৈরাচারী আচরণ বন্ধ করতে হবে।’
একই সাথে জনগণের স্বার্থে বিএনপিকে পেট্রোল বোমা মারা বন্ধ করারও আহ্বান জানান তিনি।
অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের ঐক্যের প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে অধিকার আদায় হয়। শ্রমিকদের অধিকার আদায় করতে হলে ঐক্যের জন্য আপোষহীন অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।’
কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা চিন্তা করি কিভাবে শ্রমিকদের কম মজুরি দেওয়া যায়। এ চিন্তা থেকে মালিকদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ড এবং রানাপ্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু ও শ্রমজীবী মানুষের প্রতি পুঁজিবাদী শোষণ লুণ্ঠনের চিত্র তুলে ধরে লেখা ‘লাখো শ্রমিকের বুক ফাটা কান্না’ বইটির সম্পাদনা করেন এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল। বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ।
এ সময় আনু মোহাম্মদ বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের দুই বছর হতে চলল কিন্তু কতজন শ্রমিক মারা গিয়েছে তার সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এখনো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেওয়া অনুদানের ২০০ কোটি টাকা পড়ে থাকলেও সঠিক পরিচয় না পাওয়ায় তিনি সে অনুদান ব্যবহার করতে পারছেন না। ক্ষতিপূরণ যার পাওয়ার কথা তারা আজ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। অপরদিকে, এই সুযোগে কিছু চালাকশ্রেণীর লোক ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে।’
বর্তমান রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ৪০ বছর পরও আমাদের দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নাই। একদিকে পেট্রোল বোমার আঘাত, অন্যদিকে পুলিশের গণগ্রেফতার। এই পরিস্থিতির বেশীরভাগ শিকার হচ্ছে দেশের শ্রমিক শ্রেণী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য দমন-পীড়ন বেছে নিয়েছে, অন্যদিকে বিএনপি তাদের আন্দোলনে জনগণকে সফলভাবে কাজে লাগাতে না পেরে পেট্রোল বোমার রাজনীতি বেছে নিয়েছে।’