মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ; বাংলাদেশের গণতন্ত্র দেখতে আসছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কমিটি
মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার সংক্রান্ত উপ-কমিটির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আসছে।
দুই দশকের মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার সংক্রান্ত উপ-কমিটির এটাই হবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর।
ঢাকায় অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুখপাত্র শনিবার রাতে দ্য রিপোর্টকে জানান, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দল ফেব্রুয়ারিতে আসার কথা রয়েছে। তবে তাদের সফর সূচির সবকিছু এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হলেই তা গণমাধ্যমকে জানানো হবে।
একাধিক কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, মূলত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দলটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে আসছেন। পাশাপাশি দলটি মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার এবং সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার সংক্রান্ত উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ইলিনা ভেলেন্সিয়ানো চার সদস্যের দলটির নেতৃত্ব দিবেন। বাকিরা হচ্ছেন—ক্যারোল কারস্কি, ক্রিস্টিয়ান ড্যান প্রিদা এবং জোসেফ ওয়াইডেনজার।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দলটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিভিন্ন দলের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রসঙ্গত, পাঁচ জানুয়ারির পর বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অচলাবস্থার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক ফোরাম উদ্বেগ এবং নিন্দা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি সহিংসতা বন্ধ এবং গণতন্ত্রের যাত্রা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রধান ও রাষ্ট্রদূত পিয়েরি মায়াডন গত ১৪ জানুয়ারি গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বলেন, ‘চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় গণতন্ত্রের চর্চা সংকুচিত হচ্ছে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সমাবেশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে, মানুষের চলাচল ও বাক স্বাধীনতা হরণের বিপরীতে কখনও শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং সহিংসতায় অনেক প্রাণহাণির ঘটনা ঘটছে, অনেকে আহত হচ্ছেন এবং সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জানুয়ারি সাবেক পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ রহমানের উপর ভয়ঙ্কর হামলার ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি গত ১৪ জানুয়ারি রংপুরের একটি যাত্রীবাহী বাসেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়গুলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন গত ১৪ জানুয়ারি গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান সহিংসতার ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন।’
বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশে রবার্ট গিবসন বলেন, ‘যুক্তরাজ্য সকল পক্ষকে সংযত থাকা, পরিমিতিবোধের চর্চা, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং সহিংসতা ও স্বাভাবিক জীনবযাত্রায় বিঘ্ন সৃষ্টির এই পুনরাবৃত্তি থেকে নিষ্কৃতি পেতে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে।’
ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে একই দিনে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা সারা দেশজুড়ে হতাহতের খবরে মর্মাহত। আমরা ভুক্তোভোগী পরিবারদেরকে গভীর সমবেদনা জানাই। আমরা সকল পক্ষের সহিংসতার নিন্দা জানাই।’
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অচলাবস্থার জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গত ১৬ জানুয়ারি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতার কারণে দেশটি ধ্বংসাত্মক পরিণতির দিকে যাচ্ছে।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা সামডাসানি চলমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। সংস্থাটির অনলাইনে প্রকাশ করা ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের দুইটি প্রধান রাজনৈতিক দল নিজেদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমাঝোতা করতে না পারায় দেশটিতে ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে, যা প্রচণ্ড উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক সহিংসতায় সাধারণের প্রাণহানি, আহত, পঙ্গুত্ববরণের ধারাবাহিক ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।’