টানা হরতাল-অবরোধের হুমকি বিএনপির
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘এখনও পর্যন্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আবাসস্থল গুলশানস্থ কার্যালয়ে ইন্টারনেট, টেলিফোন, ক্যাবল নেটওয়ার্কসহ সকল বৈদ্যুতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করা হয়নি। অবিলম্বে এ সমস্ত সংযোগ পুনঃস্থাপন না করা হলে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে অবিরাম হরতাল ও অবরোধ অব্যাহত রাখা হবে।’
দেশ এখন গণতন্ত্রের পরিবর্তে শেখ হাসিনার মনোতন্ত্র এবং ইচ্ছাতন্ত্রে প্রবেশ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছামত গুলি করে আন্দোলনকারীদের হত্যার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে দলীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এবং দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে।’
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে রবিবার সন্ধ্যায় বিএনপির নতুন মুখপাত্র সালাহ উদ্দিন আহমেদ এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউসহ পৃথিবীর তাবৎ উন্নত রাষ্ট্র সমূহ, মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠনসমূহের উদ্বিগ্নতা সত্ত্বেও অবৈধ সরকার প্রতিনিয়ত ক্রসফায়ারের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাইকারী হারে হত্যা করছে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে কলুষিত করার কুমানসে সরকারি এজেন্টরা পেট্রোল বোমা হামলার মাধ্যমে মানুষ হত্যা করে তার দায়-দায়িত্ব বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ওপর দোষ চাপানোর পুরনো কৌশল অবলম্বন করছে এই অবৈধ সরকার। অত্যন্ত চাতুরতার সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটকে আওয়ামী প্রচার কেন্দ্রে পরিণত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই পেট্রোল বোমা হামলাকারীদের গ্রেফতার ও তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবী করছি। কিন্তু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে পরিকল্পিতভাবে এর জন্য ঢালাওভাবে দায়ী করাকেও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বস্তুতপক্ষে এটা ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী অপরাজনীতির পুরনো সংস্কৃতি।’
সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামী করে মামলা করার জন্য সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে এক মাঘে শীত যায় না, এই দিন দিন না, আরও দিন আছে।’
তিনি বলেন, ‘ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের ততোধিক অবৈধ এতিম মন্ত্রীরা দিনমান কোরাশ গেয়ে বেড়াচ্ছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে। প্রতিযোগিতা দিয়ে তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুণ্ডুপাত করছেন। তাদের এহেন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও ঘৃণ্য বক্তব্যের জবাব দেওয়ার মতো বাংলা ভাষার অরুচিকর শব্দগুলো আমরা আয়ত্ত্ব করতে সক্ষম হইনি। তারা জনসভা করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভাতে মারার, পানিতে মারার ঘোষণা দিয়েছেন। এ যেন গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী জনগণের বিরুদ্ধে বিজাতীয় শত্রুদের আস্ফালন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছেন-জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের সংগ্রামে তিনি দেশ ও জাতীর স্বার্থে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।’
এ দেশের জনগণ দুঃশাসনের কবলে পড়েছে এবং গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে শেখ হাসিনার প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের কারণে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করায় এই রাজনৈতিক সমস্যার সূত্রপাত, যে সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনা এককভাবেই নিয়েছেন। সংবিধান সংশোধনীর জন্য গঠিত ১৫ সদস্যের সকল সদস্য সর্বসম্মতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। সুপ্রীম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই এই সংশোধনী পাশ করেন। গণতন্ত্র গিলে খেয়েছে আওয়ামী লীগ বারে বারেই। ১৯৭৫ এ বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। পঞ্চদশ সংশোধনীর দংশনে সংবিধান ও গণতন্ত্র মৃতপ্রায়। আওয়ামী লীগের ইতিহাস বারে বারে গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস।’
ব্এিনপির মুখপাত্র বলেন, ‘গণতন্ত্র হত্যাকারী সর্ববিনাশী আওয়ামী শক্তিকে বিতাড়নের এই সংগ্রামে দেশবাসীকে সাময়িক ত্যাগ স্বীকারের জন্য আমরা বিনীত আহ্বান জানাই। জনদাবি আদায়ের এই কষ্টসাধ্য ও শোকবেদনা গণতন্ত্রের বিজয় অর্জনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়নকে সাফল্যমণ্ডিত করবে।’
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশব্যাপী চলমান ৭২ ঘন্টার শান্তিপূর্ণ হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিকে সফল করার জন্য সংগ্রামী দেশবাসীকে বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে অবিরাম সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’