গোপনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এরশাদ
দেশের টালমাটাল অবস্থার মধ্যেও গোপনে পুরোদমে নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ জন্য যেসব এলাকায় শক্তিশালী দলীয় প্রার্থী নেই সেসব এলাকায় ব্যবসায়ীদের দলে ভেড়ানো হচ্ছে।
জাপা নেতারা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে ১৫১ আসনে জয়ী হওয়ার টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ জন্য বিভিন্ন জেলায় জাপার সাবেক নেতাদের সঙ্গে যেমন যোগাযোগ করা হচ্ছে তেমনি কাউন্সিলের মাধ্যমেও পার্টিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
জাপা সূত্রের দাবি, এ জন্য এরশাদ নিজেও কৌশলী ভূমিকা নিয়েছেন। আগামী নির্বাচন যেকোনো সময় হতে পারে—এমন ধারণা থেকে এরশাদ নিজের দলের পুরনো গ্রুপিং নিজেই চাঙ্গা করিয়েছেন। তিনি জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে দিয়ে যেমন পার্টির কাজ করাচ্ছেন। অন্যদিকে দলে থাকা বাবলুর বিরোধী অংশকে দিয়েও পার্টি শক্তিশালী করাচ্ছেন, যাতে দলে থাকা সরকারবিরোধীরাও না চটে। নিজের বলয়েই থাকেন।
জাপার একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এরশাদ দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে যেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন, তেমিন দলে থাকা বাবলুবিরোধী নেতাদেরও ডেকে এনে সময় দিচ্ছেন, দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতির খোঁজখবর নিচ্ছেন। পার্টি শক্তিশালী করার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছেন। সংগঠনে সময় দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন।
জাপার প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য দ্য রিপোর্টকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘স্যার আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। যেকোনো সময় নির্বাচনের ঢাক-ঢোল বেজে উঠতে পারে। এ জন্যই আমাদের ডেকে যার যার জেলায় প্রার্থী খুঁজতে ও সংগঠন শক্তিশালী করতে বলেছেন।’
জানা গেছে, এর অংশ হিসেবে সোমবার সকালে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করানো হচ্ছে নরসিংদীর শিবপুরের ব্যবসায়ী আলী হোসেনকে। ব্যবসায়ী আলী হোসেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে ফুল দিয়ে সোমবার দলে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেবেন।
আলী হোসেনের জাতীয় পার্টিতে যোগদানের বিষয়টি দ্য রিপোর্টকে নিশ্চিত করেছেন জাপার যুগ্ম-মহাসচিব এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, ‘আসলে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি না। আমরা চেয়ারম্যানের নির্দেশে পার্টিকে সংগঠিত করছি।’
জাপার একাধিক নেতার দাবি, এরশাদ এখন দোটানায় ভুগছেন। জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদের চাপে সরকারের পক্ষে নানা বিবৃতি দিলেও দলের একটি অংশকেও তিনি ম্যানেজ করে চলছেন। তাদের কাছে আবার নিজের অপারগতা তুলে ধরছেন। তিনি দুই পক্ষকেই পার্টির জন্য কাজ করতে বলছেন। এরশাদ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন বলেনও জানান জাপার নেতারা।
তবে সরকারে থাকা মন্ত্রীদের পদত্যাগের বিষয়ে এরশাদ কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। এ সিদ্ধান্ত পুরোটাই রওশন এরশাদের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন জাপার একাধিক নেতা।
এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘অনেক জেলা থেকেই বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা আমাদের পার্টিতে যোগদানের জন্য যোগাযোগ করছেন। আমরা সবাইকে নিচ্ছি না। যারা এলাকায় প্রভাবশালী ও নিষ্কুলুষ তাদেরই আমরা নিচ্ছি। আমরা পুরোদমে পার্টিকে সংগঠিত করতে নেমেছি। আগামী নির্বাচনে আমরা অবশ্যই ১৫১ আসনে জয়ী হব।’
বাবলু বলেন, ‘আমাদের যেমন যোগদান অনুষ্ঠান চলবে। তেমনি বর্তমানে চলমাস সহিংস রাজনীতি ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে নতুন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আগামী সপ্তাহেও আমরা কর্মসূচি দেব।’
জাপা মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের পার্টিতে এখন কোনো গ্রুপিং নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমরা জনগণের আস্থাভাজন ও নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের তৈরি করার কাজ করছি। আগামী নির্বাচন যখনই হোক আমরা নির্বাচনে অংশ নেব এবং ১৫১ সিট অর্জন করব ইনশাআল্লাহ।’