অফিস ছাড়বেন না খালেদা
‘এটা আমার কার্যালয়, এখানে আমার কাজ আছে; আমি কাজ করব’— এমনটা আগেই বলেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পরও তিনি অফিস ত্যাগ করেননি। বিদ্যুৎ-ডিশ-ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরও অফিসে রয়ে গেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অফিসেই থাকবেন তিনি। প্রয়োজনে জেলখাটতেও প্রস্তুত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে অফিসে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ও কার্যালয়ের কর্মকতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানও এমন ইঙ্গিত দিলেন। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের ব্যাপারে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) অনড় আছেন। যেহেতু এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের পরিবর্তন আসেনি, সেহেতু তিনি কার্যালয়ে থেকেই আন্দোলন পরিচালনা করবেন এমনটাই শুনেছি।’
আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অফিস সূত্রে জানা যায়, অফিসে থেকে সারাদেশে নেতাকর্মীদের আন্দোলনের নির্দেশনা দেওয়াসহ এখানে অবস্থান করা বাসার তুলনায় অনেকটা সহজ মনে করছেন খালেদা জিয়া। অফিসে থাকায় দলের সিনিয়র নেতা ও সুশীল সমাজের নাগরিকদের সঙ্গে দেখা করাটাও সহজ হচ্ছে। এছাড়া অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ফলে দেশী-বিদেশী অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে অফিসে থাকাটাই বেশি লাভবান বলে মনে করছেন তিনি। ফলে অফিসে থেকেই আন্দোলনের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া।
ইতোমধ্যে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু শোক কিছুটা সামলে উঠেছেন। পুত্রশোকে কাতর খালেদা জিয়ার সঙ্গে বেশ কয়েক দিন পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ দেখা করতে পারেননি। কিন্তু গত ২৯ জানুয়ারি রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এর মধ্যে ড. আর এ গনি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সারোয়ারি রহমান, ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান উল্লেখযোগ্য।
তবে ওই রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এসে কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে এসেছিলাম। এ সময় কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি।’
এর পরদিনই খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর গুলশান কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সঙ্কট সমাধানে আমরা ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
৩১ জানুয়ারি রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ। ওই সময় তিনি কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘এভাবে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে নিরাপত্তহীনতায় রাখাই হচ্ছে হত্যার ষড়যন্ত্র। আপাতদৃষ্টিতে এটাকে হত্যার ষড়যন্ত্র বলেই মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দুনিয়ার কোথাও এমন অমানবিক আচরণ দেখা যায়নি। যারা এ আচরণ করেছে আল্লাহ তাদের ছাড়বে না। সরকার গণতন্ত্রের নামে প্রতিহিংসাপরায়ণতা চালাচ্ছে।’
এ ছাড়াও ওই (৩১ জানুয়ারি) রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ।
অফিসে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান রবিবার রাতে বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায় করেই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করবেন খালেদা জিয়া।’
তিনি আরও বলেন, ছোট ছেলের মৃত্যুশোক কাটিয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) এখন প্রাণবন্ত। ছোট ছেলের জানাজায় লাখ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি দেশের মানুষের জন্য দাবি আদায়েও অনেকটাই উজ্জীবিত।’
চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের আরেক সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আগের তুলনায় অনেকটাই সুস্থ আছেন। পরিবারের সদস্য ছাড়াও দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। সুশীল সমাজের অনেকেই দেখা করতে আসছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) আন্দোলনের খোঁজখবর নিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘আজকে রাতে (রবিবার) ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করেছেন বিচারপতি আব্দুর রউফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি আফম ইউসুফ হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর তাজমেরি এস ইসলাম, প্রফেসর মোর্শেদ আলম প্রমুখ।’
গত ৩ জানুয়ারি রাতে খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। ১৮ জানুয়ারি রাতে এ ব্যারিকেড তুলে নেওয়া হলেও খালেদা জিয়া অফিস ছাড়েননি।
এর পরদিন ১৯ জানুয়ারি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এটা আমার কার্যালয়, এখানে আমার কাজ আছে। আমি কাজ করব। আমার কার্যালয়ের অবরোধ যখন তুলে নিয়েছে- আমার যখন ইচ্ছা, যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারি।’