ক্ষুব্ধ এরশাদ
সরকারের ওপর চরম ক্ষুব্ধ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে বালুর ট্রাক রাখার পর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাতে বিশ্বমিডিয়ায় ব্যাপক কাভারেজ পেয়েছেন তিনি। এতে সরকারের ওপর ভীষণ ক্ষেপেছেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ।
জাপার একাধিক সূত্রের দাবি, এরশাদ ভারত সফর শেষে বাংলাদেশে ফিরেই নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ লক্ষ্যেই এরশাদ তার অনুগত সংসদ সদস্যদের নিয়ে সোমবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে বৈঠক করেছেন। দুপুরের খাবার খেয়েছেন। খাবার খাওয়ার ফাঁকে অনেকের সঙ্গে আলাপও করেছেন। জানিয়েছেন সরকারের প্রতি নিজের বিরূপ মনোভাব।
এরশাদ ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে ভারতে যাচ্ছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরবেন। এছাড়া ১২ ফেব্রুয়ারিতেও এরশাদের ভারতে যাওয়ার টিকেট কাটা রয়েছে। সেখানে রিটার্ন টিকিট কাটা রয়েছে ১৬ তারিখের।
এ বিষয়ে জাপার কোষাধ্যক্ষ ও এরশাদের ব্যক্তিগত সহকারী মেজর (অব.) খালিদ আখতার বলেন, ‘৩ ফেব্রুয়ারি স্যারের সঙ্গে আমি যাচ্ছি। ১২ ফেব্রুয়ারি দেশের পরিস্থিতি ভাল থাকলে যাব, না থাকলে যাব কিনা নিশ্চিত না।’
র্যাডিসনে এরশাদের সঙ্গে পরে এসে যোগ দিয়েছিলেন বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, এমএ হান্নানসহ ২৫ থেকে ২৬ জন সংসদ সদস্য। এছাড়া দলের কিছু জ্যেষ্ঠ নেতারও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
জাপার এরশাদঘনিষ্ঠ এক নেতার দাবি, এরশাদ ভারত থেকে ফিরে রাজনীতির গতিপ্রকৃতি বুঝে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগের মতো হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন না। সব পরিস্থিতি বুঝে-শুনে তিনি সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন। তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রশাসনের সঙ্গে এরশাদ সাহেবের খুবই ভাল সম্পর্ক। সেখানে অবস্থান করে পরিস্থিতি বুঝে-শুনে এরশাদ সাহেব সিদ্ধান্ত নেবেন।
জাপার একজন সংসদ সদস্য জানান, সরকারের নানা পদক্ষেপে এরশাদ খুবই চটেছেন। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় সারাবিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। বিশ্ববাসীর ধারণা বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। পার্লামেন্টে যে বিরোধী দল রয়েছে সে ব্যাপারে সারাবিশ্ব অন্ধকারে। এটা নিয়ে এরশাদ খুব ক্ষেপেছেন।
বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয় পার্টিতে কয়েকজনের যোগদান অনুষ্ঠানে সোমবার দুপুরে এরশাদ বলেন, ‘বিএনপিকে ৫ জানুয়ারি সরকার কেন সমাবেশ করতে দেয়নি জানি না। কিন্তু আপনারা (সরকার) বিএনপিকেই বিরোধী দল হিসেবে সারাবিশ্বে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। সারাদেশের পত্রিকায় এখন শিরোনাম খালেদা জিয়া। কেন তাকে এত সুযোগ করে দিচ্ছেন— জানি না।’
এরশাদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘যেখানে বাচ্চারা পরীক্ষা দিতে পারছে না, পত্রপত্রিকায় এ সব লেখা হবে। সেখানে লেখা হলো খালেদার কার্যালয়ে ১৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই। কেন বিদ্যুতের লাইন কাটা হলো, কেন? আসলে সরকার সবদিক দিয়ে ব্যর্থ। সরকার জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।’
সরকারের উদ্দেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘অদৃশ্য শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আপনারা বলেছিলেন, সাত দিনের মধ্যে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু হয়নি। অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করা যায় না। এখন অদৃশ্য শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।’
এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু দ্য রিপোর্টের কাছে দাবি করে বলেন, ‘স্যার (এরশাদ) শুধু বন্ধুর ছেলের বিয়েতে দাওয়াত খেতে ভারতে যাচ্ছেন। অন্য কোনো কারণে নয়।’
বাবলু র্যাডিসনের বৈঠকের বিষয়ে বলেন, ‘এটাও সৌজন্য খাবারের অনুষ্ঠান ছিল। স্যার (এরশাদ) দলের এমপিদের নিয়ে দুপুরে খেয়েছেন। ম্যাডামও (রওশন এরশাদ) ছিলেন।’
ভারত থেকে ফিরে এরশাদের বর্তমান অবস্থান পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে বাবলু বলেন, ‘কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি আর মাথাচাড়া দিতে পারবে না। সরকারের পতন হবে না। মানুষের সাময়িক কষ্ট হচ্ছে, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’