‘হাসিনাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে’
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সরকারি পেটোয়াবাহিনীর শত বুলেটের আঘাতে অজস্র আন্দোলনকারী রাজপথে প্রতিনিয়ত প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে অকাতরে। গ্রেফতার বরণ করছে আন্দোলনকারী অসংখ্য নেতাকর্মীসহ নিরীহ জনগণ। জাতি তাদের আত্মত্যাগ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণে রাখবে।’
দলীয় প্যাডে স্বাক্ষর করা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সোমবার বিকেলে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পৈশাচিক গণহত্যার দায় নিয়ে শেখ হাসিনাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, সেদিন আর বেশী দূরে নয়। নির্বিচারে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করার আদেশ দিয়ে তিনি সেই দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন। তার দলের নেতা-মন্ত্রীরা মিছিলকারীদের কোন কোন অঙ্গে কীভাবে গুলি করতে হবে তার নির্দেশনাও দিয়ে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সকল দরজা বন্ধ করে, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করে, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের ব্যবস্থা রুদ্ধ করে, সংবাদপত্র ও টেলিভিশন বন্ধ করে সরকার অনিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এবং উগ্রপন্থাকেই উৎসাহিত করছে। যার ফলশ্রুতিতে দেশের অবরুদ্ধ গণতন্ত্র বিলুপ্ত প্রায়। গণতন্ত্রের যাত্রা ব্যাহত হলে এই ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকারকেই তার দায় নিতে হবে।’
বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, ‘বিরোধী দলের কার্যালয় অবরুদ্ধ করে, গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সরবরাহ বন্ধ রেখে, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে, টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট সংযোগ কর্তন করে বর্বর ও পৈশাচিক কায়দায় জনগণের ন্যায্য আন্দোলন দমানোর অপচেষ্টা বুমেরাং হতে বাধ্য।’
তিনি বলেন, ‘যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে সরকার মধ্যরাতের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ পরিচালনায় দলীয়করণ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রণসজ্জায় সজ্জিত করে শহর, বন্দর, গ্রামসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলকে ভয়াল জনপদে পরিণত করেছে।’
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) ঢাকা মহানগরের শাহ আলী থানার শিবির নেতা এমদাদ উল্লাহকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে ক্রসফায়ারের আষাঢ়ে গল্প সাজানো হয়েছে বরাবরের মতো। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি। ইতোপূর্বে ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনি, মতিয়ার রহমান, শিবির নেতা আসাদুজ্জামান তুহিন, জামায়াত নেতা ইমরুল কায়েসসহ সারাদেশে যে সকল বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের এভাবে হত্যা করা হয়েছে সে সব হত্যাকাণ্ডের জন্য ভবিষ্যতে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হুকুমের আসামি করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) সরকারের গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, এনটিভির চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোসাদ্দেক আলী ফালুকে। তার গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’
একুশে টিভির এমডি জনাব আ. সালামকেও বিনা অপরাধে গ্রেফতার করে এবং একুশে টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রায় সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে বিভিন্ন কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করে সরকারের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে আড়াল করার ষড়যন্ত্রের একটি অংশ হিসেবে এ সকল দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখা হচ্ছে।’
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গতকাল নিউ এইজ পত্রিকার দু’জন সাংবাদিক একইভাবে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে মরণ যন্ত্রণা ভোগ করছে। আমরা সকল সাংবাদিক নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ এবং ধিক্কার জানাই। সেই সঙ্গে আহ্বান জানাই দেশের সাংবাদিক সমাজকে এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য। একই সঙ্গে প্রখ্যাত সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছি। দাবি জানাচ্ছি, সাহসী কণ্ঠস্বর মাহমুদুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তির। সরকারকে এই বলে হুঁশিয়ার করতে চাই যে, সাংবাদিক এবং সংবাদ মাধ্যমকে দমন করে, নিয়ন্ত্রণ করে কোনো সরকার গদি রক্ষা করতে পারেনি। আপনারাও পারবেন না। ইতিহাস তাই সাক্ষ্য দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত শনিবার মিরপুরের নাসিম প্লাজায় অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের উক্ত ঘটনায় সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’