চার বছর পর ঢাকায় প্রাণোচ্ছল ফুটবল
ফুটবলের প্রতি ঢাকার বাইরের দর্শকদের আগ্রহটা সাড়া জাগানিয়া। কেন জানি ঢাকায় সেভাবে দর্শক টানতে পারছিল না বাংলাদেশের ফুটবল। তবে সোমবার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম প্রাণ ফিরে পেয়েছে হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে। প্রায় ৪ বছর পর ঢাকার বুকে দেখা গেছে প্রাণোচ্ছল ফুটবলের জোয়ার।
গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে যশোর ও রাজশাহীর মানুষের আগ্রহ ছিল বাঁধভাঙা। সিলেটে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ সব ম্যাচেই ছিল দর্শক জোয়ার। কিন্তু ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্দু গোল্ডকাপের প্রথম দিনে গ্যালারি নিষ্প্রাণ ছিল। বাহরাইন ও সিঙ্গাপুরের ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ দেখাননি দর্শকরা। কিন্তু সোমবার বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে পাল্টে গেছে এই দৃশ্য।
এই ম্যাচ ঘিরে মাঠের আশপাশে বিরাজ করেছে উৎসবের আমেজ। সবকটি গ্যালারিতে ছিল বিপুল পরিমাণ দর্শক। একটা সহজ হিসাব ছিল বাংলাদেশের সামনে। ড্র করলেই সেমিফাইনালে যাবে। সেই হিসেব মেলাতে খাতাও নিয়ে এসেছিলেন ফুটবল ভক্তদের অনেকে। জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ, সঙ্গে সেমিফাইনালের টিকেট। ম্যাচ দেখতে যারা এসেছেন, ম্যাচশেষে তাই তাদের চেহারায় স্বস্তির ছাপ। যারা আসতে পারেননি, নিশ্চয় তাদের মনে ছিল আফসোস।
ঢাকার মাঠে দীর্ঘদিন দর্শকদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। প্রায় ৪ বছর কোনো জয় নেই। দীর্ঘদিন পর হলেও সেই আফসোসটা ঘুচানো সম্ভব হয়েছে সোমবার। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির সেমিফাইনালকে ঘিরে তাই ঢোকার দর্শকদের আগ্রহটা নিঃসন্দেহে বেড়ে যাবে আরও কয়েক গুণ। প্রতিপক্ষ যে দলই হোক না কেন, মামুনুলদের সঙ্গে থাকবেন স্টেডিয়াম ভর্তি হাজারো দর্শক।
সাধারণত বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচ থাকলে মিরপুরে টিকিটের জন্য দর্শক সারিতে থাকে হাজারো মানুষ। গৌরব হারানো ফুটবলকে ঘিরে তেমনই উৎসাহ দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে।
ঢাকার মিরপুর থেকে এসেছিলেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তানভীর হাসান। বাংলাদেশের ম্যাচ নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বাসিত তিনি; ম্যাচের আগে বলেছেন, ‘খুব ভাল লাগছে। ঘরের মাটিতে নিজেদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখা মিস করতে চাইনি। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কাকে আগেও হারানোর অভিজ্ঞতা আছে। আজও হারাবে এই বিশ্বাস নিয়েই মাঠে এসেছি।’
তানভীরের এই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ২০১১ সালের পর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথম জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। গত ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের দ্বিতীয় লেগে লেবাননকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর সোমবারই প্রথম জয়ের ঢাকার মাটিতে মুখ দেখেছে বাংলাদেশ ফুটবল দল।
ম্যাচশেষে তাই নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন দর্শকরা। কিছু সংখ্যক প্রমালী ভক্তও এসেছিলেন। তাদেরই একজন মুনিয়া। মাঠ থেকে বেরিয়ে জানালেন উচ্ছ্বাসের কথা, ‘খুবই ভাল লাগছে। বাংলাদেশের জয় চোখের সামনে দেখে আমি দারুণ আনন্দিত।’
একইভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সপরিবারে মাঠে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কামরুল হাসান। বিকেলে খেলা হওয়ায় আসতে পারার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার চললেও পরিবারসহ খেলা দেখার সুযোগটা মিস করতে চাইনি। বাংলাদেশের জয়ের পর খুব ভাল লাগছে।’