১৮ সংগঠনের ২৩ মাইক, কেউ শুনছেন না কারো কথা
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিদিন বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন তাদের কর্মসূচি পালন করে থাকেন। একই সময়ে চলে একাধিক সংগঠনের কর্মসূচি। সংগঠনগুলোর একাধিক মাইকের উচ্চশব্দে শব্দদূষণ যেমন হয়, তেমনি উপস্থিত সাংবাদিকরাও খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন।
বুধবারও জাতীয় প্রেস ক্লাবের চিত্র অন্য দিনের চেয়ে ব্যতিক্রম ছিল না। এ দিনও ১৮টি সংগঠন ২৩টি মাইক লাগিয়ে তাদের কর্মসূচি পালন করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আয়োজক সংগঠনগুলোর নেতারা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা ২৩টি মাইক লাগিয়ে উচ্চশব্দে বক্তৃতা দিচ্ছেন। তবে মাইকের শব্দে কেউ কারো কথা শুনতে পারছেন না। গণমাধ্যমের কর্মীরাও কোন সংবাদ রেখে কোনটা কাভার করবেন তা নিয়ে পড়েন বিপাকে। কখনো কখনো আয়োজকরাও হন বিব্রত।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, প্রেস ক্লাবের সামনের ওভারব্রিজে নিচে বিএনপির ডাকা হরতালের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছেন ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগ। সেখানে লাগানো হয়েছে তিনটি মাইক। এতে প্রধান অতিথি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
একই সময় পশ্চিম পাশে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছিল সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা মহাজোট। সেখানেও দুটি মাইক লাগানো। ব্যানারে লেখা প্রধান অতিথি আ ক ম মোজাম্মেল হক। আগের অনুষ্ঠান কোনোমতে শেষ করে সেখানে আসেন প্রধান অতিথি।
এর পশ্চিম পাশে একই সময়ে ব্যানার নিয়ে প্রেস ক্লাবের প্রধান ফটকের সামনে জামায়াত-শিবিরের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন করছিল বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট। সেখানেও প্রধান অতিথি আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। সমাবেশ পরিচালনা করছিলেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা। মুক্তিযোদ্ধা মহাজোটের মানববন্ধন শেষ হওয়া মাত্রই সেখান থেকে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক আসেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের মানববন্ধনে।
মন্ত্রীকে পেয়ে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা তাদের কর্মসূচিতে থাকা মন্ত্রীর বক্তব্য প্রচারের জন্য উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের অনুরোধও জানান।
একই সঙ্গে এতগুলো কর্মসূচিতে মাইক ও একই অতিথির ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা বলেন, ‘ভাই, খুব সমস্যা। সবাই এত কথা বলে, কারো কথাই ঠিকমতো শুনতে পারছি না। আর সবাই গেস্ট করছে মন্ত্রীকে। মন্ত্রীও তো কাউকে না করতে পারেন না।’
একই সময়ে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন করে আওয়ামী স্বাধীনতা পরিষদ। দাবি একই, বিএনপির নৈরাজ্যের প্রতিবাদ। সেখানেই মাইক লাগিয়ে বক্তৃতা করছিলেন একজন। জিজ্ঞাসা করলে জানান, তার নাম শামীম চৌধুরী। প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে আসেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। সেখানেও লাগানো ছিল দুটি মাইক।
এর পশ্চিম পাশে জামায়াত-শিবিরের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগের নেতারা। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। সেখানে মাইকের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশী। পাঁচ মাইকে ভেসে আসছিল অতিথিদের বক্তব্য।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাদের মানববন্ধনের পেছনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিল নাগরিক ছাত্র ঐক্য। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এখানে মাইকের সংখ্যা দুটি। এক পর্যায়ে মাইকের শব্দে বিরক্ত হয়ে রাবির সাবেক নেতারা নাগরিক ছাত্র ঐক্যের মাইক ২০ মিনিট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান।
এ সময় নাগরিক ঐক্যের নেতাদের হাসাহাসি করতে দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নেতা বলেন, ‘কী করব, আপনাদের (সাংবাদিক) অফিসে ডাকলে তো আর আসেন না। এখানে এলে কাভারেজ পাওয়া যায়, এ জন্য সবাই আসে।’
প্রেস ক্লাবের দেয়াল ঘেঁষে একই সময়ে খালেদা জিয়াকে অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিল ছয়টি সংগঠন।
সংগঠনগুলো হল— বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল), ন্যাপ ভাসানী, গণসংগ্রাম পার্টি, গণঅধিকার পার্টি, বাংলাদেশ দরিদ্র পার্টি, বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি, কাজী আরেফ ফাউন্ডেশন।
ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান বলেন, ‘মাইকের শব্দে কারো কথাই শুনতে পাচ্ছি না। তাই আমরা সবার মানববন্ধন শেষ হলে তখন কর্মসূচি শুরু করব। এখন থেকে ২০ মিনিট আগে-পরে মানববন্ধন বা অন্য কর্মসূচি পালন করা দরকার।’
এভাবেই প্রতিদিন প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো তাদের কর্মসূচি পালন করে থাকেন। রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকদের দাবি, প্রত্যেক সংগঠন যদি ১০ মিনিট আগে-পরে কর্মসূচি পালন করেন তাহলে আর শব্দদূষণ কিংবা কাউকে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। সাংবাদিকরাও সহজেই সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবেন।
বেসরকারি টেলিভিশন যমুনার সাংবাদিক বিথি বলেন, ‘প্রেস ক্লাবে একই সঙ্গে ১০টি সংগঠন ২০টি মাইক লাগিয়ে যদি দাবি জানায় তাহলে আমরা কার কথা শুনব। মাইকের উচ্চশব্দে তো আমরা দাঁড়াতেই পারি না। সবাই যদি ১০ মিনিট বিরতি নিয়ে সংগঠনগুলো পালাক্রমে কর্মসূচি পালন করে তাহলে ভাল হয়।’