যশোরে ডায়রিয়ার প্রকোপ : ১৭ দিনে হাসপাতালে ৫০০
যশোরে ডায়রিয়া পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত ১৭ দিনে জেলার ৪৮৮ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৬২ জন।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের করিডোর ছাপিয়ে রোগীদের ঠাঁই হয়েছে প্রসূতি, জরুরী, বহির্বিভাগের প্রশস্ত লেনে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলার অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে চিকিৎসকদের প্রেষণে নিয়ে আসা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে হাসপাতালের চিকিৎসক-সেবিকাদের ছুটি।
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগী ভর্তির রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আকস্মিকভাবে জেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। বুধবার পর্যন্ত মোট ৪৮৮ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন এ হাসপাতালে। বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ৬২ রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. শ্যামলকৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে পানিবাহিত ও বাসি খাবারে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তবে এর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে মঙ্গলবার রোগীদের মল সংগ্রহ করে স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট ৭২ ঘণ্টা পর পাওয়া যাবে। এ ছাড়া, কোনো ভাইরাসে ডায়রিয়া ছড়াচ্ছে কিনা- তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে পরীক্ষা প্রয়োজন তা শুধু রাজধানীর মহাখালীস্থ রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ ইনস্টিটিউটেই সম্ভব। কিন্তু, হরতাল-অবরোধের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।’
ভাইরাস পরীক্ষা করিয়ে আনা সম্ভব হবে জানিয়ে ডা. শ্যামলকৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘ডায়রিয়ার এতো প্রকোপ কি কারণে তা জানা জরুরী। তাহলে ভবিষ্যতে সতর্ক হওয়া যাবে।’
বুধবার দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসক-সেবিকাদের ডায়রিয়া রোগীদের সেবায় কর্মব্যস্ত দেখা যায়। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সর্বক্ষণ কাজ করছেন ১৫ সেবিকা। সবাই ভীষণ ব্যস্ত। কথা বলতে চাইলে ‘সময় নেই, সুপার স্যারের সঙ্গে কথা বলেন’- পরামর্শ দিলেন ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স শিখা সুলতানা।
ডায়রিয়া রোগীদের সুস্থ করে তুলতে কাজ করছিলেন হাসপাতালের অ্যানাটমিক বিভাগের কিউরেটর ডা. এস এম আবু সাঈদ। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি হচ্ছে না। আমরা সবাই মিলে রোগীদের সেবা দিচ্ছি। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকাদের ছুটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জেলার ছয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ছয় চিকিৎসককে প্রেষণে আনা হয়েছে। যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক এবং সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা ও তার টিমের সদস্যদেরও নিযুক্ত করা হয়েছে ডায়রিয়া রোগীদের সুস্থ করে তুলতে। নার্সিং ইনস্টিটিউটের ৩০ শিক্ষার্থীও তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন।’
ডা. আবু সাঈদ বলেন, ‘হাসপাতালের নিজস্ব মজুদ থেকে স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া যশোরের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, খুলনার হাসপাতাল, বিভিন্ন ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির কাছ থেকেও স্যালাইন সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ওষুধের কোনো ঘাটতি নেই।’
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. শ্যামলকৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়ে রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এখন পর্যন্ত একজন রোগী মারা গেছেন। যথাসময়ে হাসপাতালে আনতে ব্যর্থ হওয়ায় ওই রোগী মারা যান।’
হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের অধিকাংশই যশোর পৌর এলাকার বাসিন্দা। জেলার অন্যান্য এলাকা থেকেও কিছু রোগী আসছে। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে আশা করে চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দেন। তারা জানান, পানি ফুটিয়ে এবং খাবার গরম করে খেতে হবে। কারো পাতলা পায়খানা দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।