রাজধানীতে এক মাসে ২২৭ মামলা, গ্রেপ্তার ১১৫০, কথিত বন্ধুকযুদ্ধে নিহত ৭, গাড়িতে আগুন ১৫৩
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালে গত এক মাসে রাজধানী ঢাকায় ২২৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ শ’ ব্যক্তিকে। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ কয়েক রাজনীতিকও রয়েছেন। অন্যদিকে গত এক মাসে খোদ রাজধানী ঢাকাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৭ জন। এর মধ্যে পাঁচজনই বিরোধী জোটের নেতাকর্মী। বাকি দুজনকে দুষ্কৃতকারী বলে দাবি করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত এক মাসে রাজধানী ঢাকায় ১১টি গাড়ি ভাঙচুর ও ১৫৩টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ৩৬ পুলিশ সদস্য ও দুজন আনসার সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, যাদের বিরুদ্ধে নাশকতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তাদেরই কেবল গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৫ই জানুয়ারি থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেয়। ওই সময় থেকেই সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকাতেও ধরপাকড় শুরু করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। একে একে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ যুগ্ম মহাসচিব সম্পাদক রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল মতিঝিল এলাকা থেকে বিএনপির সাবেক দুই এমপিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া হাজারীবাগ এলাকা থেকে জামায়াত নেতা কে এম মুজিবুর রহমান ও যুবদল নেতা উজ্জ্বলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, জানুয়ারির ৫ তারিখ থেকে গত ৩রা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নাশকতাবিরোধী অভিযানে ৮৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মী ৬২৯ ও জামায়াত-শিবিরের ২১৬ জন। এ ছাড়া রাজপথ থেকেও শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত এক মাসে ৩০ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে তাৎক্ষণিক কারাদ- দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ বিএনপি নেতাকর্মী ও দুজন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। এর বাইরে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত ৫ই জানুয়ারি থেকে ৩রা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় নাশকতা বা সহিংসতার ঘটনায় ২২৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার বেশির ভাগেই বিএনপির শীর্ষ সব নেতাকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় নেতাকর্মী ছাড়াও যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাম এজাহারে হুকুমের আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৭: গত এক মাসে খোদ রাজধানী ঢাকাতেই কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন সাতজন। নিহতদের মধ্যে ৫ জনই বিরোধী জোটের নেতাকর্মী। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে র্যাব জানিয়েছে, তাদের একটি টহল গাড়িতে পেট্রল বোমা ছুড়ে মারলে র্যাব সদস্যরা দুর্বৃত্তদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে ওই দুই যুবক নিহত হয়। এর আগে শনিবার মধ্যরাতে রূপনগর বেড়িবাঁধে এমদাদ উল্লাহ ওরফে জুনায়েদ নামে এক শিবির নেতা ক্রসফায়ারে নিহত হন। গত ২৬শে জানুয়ারি রাজধানীর রামপুরায় র্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবুল কালাম ও সুলতান নামে দুই যুবক নিহত হন। র্যাবের দাবি, ওই দুই যুবক দুষ্কৃতকারী। তবে নিহতের স্বজনদের দাবি, তারা দুষ্কৃতকারী না। দুজনই গত বছরের ২১শে ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ২০শে জানুয়ারি রাজধানীতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান ওরফে জনি। জনি নিহত হওয়ার একদিন আগে মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন নড়াইল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইমরুল কায়েস। তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
সূত্র: মানবজমিন