রাবি যশোর ও চৌদ্দগ্রামে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৩ শিবির নেতা নিহত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), যশোর ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রশিবিরের তিন নেতা নিহত হয়েছেন। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও দুই শিবির ও এক ছাত্রদল নেতা।
আমাদের যশোর অফিস জানায়, যশোরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শিবিরের এক সাবেক নেতা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এক ছাত্রদল নেতাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত শহিদুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের নূর আলী সানার ছেলে এবং জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবদুল খালেকের ভাগ্নে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক জানান, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে দুইটার দিকে যশোর-খুলনা মহাসড়কের ক্ষণিকা পিকনিক স্পটের সামনে একটি সাদা মাইক্রোবাসকে চ্যালেঞ্জ করে পুলিশ। এ সময় মাইক্রো আরোহীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে একজন আহত হন। অন্যরা পালিয়ে যায়। আহত ব্যক্তিকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শার্শা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সোমেন বিশ্বাস শুক্রবার সকালে শহিদুলের লাশ শনাক্ত করেন।
পুলিশ জানায়, শার্শা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর আনার পথে পুলিশ হেফাজত থেকে সাবেক শিবির নেতা শহিদুল ইসলাম ও সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর ছাত্রদল সভাপতি আবদুল মজিদ পালিয়ে যান।
জামায়াতের যশোর জেলা কমিটির প্রচার সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন দলের সাতক্ষীরার নেতাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, সাবেক এই শিবির নেতা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। বর্তমানে কোনো পদে না থাকলেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে তিনি সামনের কাতারে থাকতেন।
এদিকে, কলারোয়া পৌর ছাত্রদল সভাপতি আবদুল মজিদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মারুফ হাসান।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারী (২৬) নিহত হয়েছেন। তবে পুলিশ বন্দুকযুদ্ধ বললেও নিহতের পরিবারের দাবি, তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার লালবাগ এলাকায় শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সাহাব উদ্দিন চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার চান্দিশকরার গ্রামের মাওলানা মো. জয়নাল আবেদীনের ছেলে। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপজেলার লালবাগ এলাকায় টহলরত পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে একদল দুর্বৃত্ত গুলি চালায়। তখন আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে উপজেলা শিবিরের সভাপতি সাহাব উদ্দিন মারা যান।’
এদিকে, নিহত শিবির নেতা সাহাব উদ্দিনের বাবা মাওলানা মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেনের নেতৃত্বে সাদা পোশাকদারী গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল দুটি মাইক্রোবাসে এসে ঘর থেকে তাকে (সাহাব) ধরে নিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে পুলিশ কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্য করেছে।’
রাজশাহী : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের তথ্য বিষয়ক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন ওরফে মহির উদ্দিন রিপন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আরও দুই শিবির নেতাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মতিহার থানার সমসাদিপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে ও শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা শিবিরের সভাপতি হাবিবুর রহমান এবং যশোরের এনায়েতপুর গ্রামের গোলমা রহমানের ছেলে মফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ উদ্দন।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কাটাখালীর সমসাদিপুর এলাকায় মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) নাহেদুল ইসলামের টহল গাড়িকে লক্ষ্য করে ককটেল হামলা চালায় শিবিরের নেতাকর্মীরা। পুলিশও তখন আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। এ সময় মাহাবুবুর নামে এক পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন।
তিনি জানান, পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত সাহাবুদ্দিন, হাবিবুর ও হাফিজুরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে শাহাবুদ্দিন মারা যান।