স্বপ্নের ফাইনালে বাংলাদেশ
শীতের শেষে বসন্তের ছোঁয়া লাগছে প্রকৃতিতে। এমনই পরিবেশে শুক্রবার পড়ন্ত বিকেলে শুরু করা লড়াই জিতে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মাঠে যেন স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে গেছেন মামুনুল ইসলাম ও তার সঙ্গীরা। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের শুরুতে যে লক্ষ্য সেট করার দুঃসাহস দেখানো যায়নি, শুক্রবার সেই স্বপ্নকেই বাস্তবে টেনে এনেছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশে ফুটবলে নবজাগরণের প্রমাণই রেখেছেন লোডভিক ডি ক্রুইফের শিষ্যরা। সেমিফাইনালের লড়াইয়ে থাইল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে ওঠেছে বাংলাদেশ। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই শিরোপা জয়ের মিশনে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচটি খেলতে নামবে বাংলাদেশ।
একটি সাফল্য বাংলাদেশকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে নতুন করে আরেকটি সাফল্যের পথে হাটতে। আত্মবিশ্বাসের পারদ ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছে মামুনুলদের। গ্রুপপর্বে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে হার দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সিলেট স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচে একাধিক গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশের ফুটবলাররা। ফিনিশারের প্রকট অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে ওই ম্যাচে। তবে ঢাকায় এসে যেন শরীরী ভাষাই পাল্টে গেছে ক্রুইফের দলের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেভাবে মাঠে আধিপত্য বিস্তার করে জিতেছিল, তেমনি শুক্রবার থাইল্যান্ডের বিপক্ষেও সেরা খেলা উপহার দিয়ে যোগ্য দল হিসেবেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন মামুনুল-এমিলি-জাহিদ-নাসিররা।
গ্রুপপর্বের দুটি ম্যাচেই প্রতিপক্ষের ওপর চাপ রেখে খেলতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালেও শুরুটা সেভাবেই হয়েছে স্বাগতিকদের। খেলার ৫ম মিনিটেই দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছিলেন নাসিরউদ্দিন। কিন্তু বা প্রান্ত থেকে তার শট পোস্টে পৌঁছার আগেই গোল লাইন অতিক্রম করেছে।
এক মিনিটের ব্যবধানে মামুনুল ইসলামের দুর্বল শটে বল চলে গেছে থাই গোলরক্ষক ইয়স সম্পরনের হাতে। খেলার ১০ মিনিটে থাইল্যান্ডের গোলপোস্টের সামনে কিছু জটলা তৈরি হয়েছে। যেখানে বল ধরতে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন দলটির অধিনায়ক। রেফারির সিদ্ধান্তের আগেই বল থাইদেরে জালে প্রবেশ করলেও গোল দেননি তিনি।
এর পর পরই থ্রো থেকে পাওয়া বলে গোলের সুযোগ মিস করেছেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ফুটবলার এমিলি। খেলার ২০ মিনিটে সোহেল রানার কাছ থেকে জাহিদ বল পেয়েছেন। বাঁ প্রান্ত থেকে সেই বল হেমন্তকে দিলেও তিনি তা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি। অবশ্য দুই-একবার পাল্টা আক্রমণেও যাওয়ার চেষ্টা করেছে থাইল্যান্ড। কিন্তু সেসব প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
বাংলাদেশ গোলের দেখা পেয়েছে খেলার ৪০ মিনিটে। এ সময় সাপিয়ানা তানাকোন কর্নারের বিনিময়ে একটি গোল হতে থাইদের রক্ষা করেছেন। তবে সেই কর্নার থেকেই মামুনুলের কিক করা বলে ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দিন চৌধুরী শূন্যে লাফিয়ে উঠে পা লাগিয়েছেন, বল চলে গেছে থাইল্যান্ডের জালে। বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে ১-০ গোলে। প্রথমার্ধে এরপর দুদলই একাধিক আকমণ করেছে। তবে সেসব আক্রমণ সফলতা খুঁজে পায়নি।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য থাইল্যান্ড আক্রমণে আসার প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। আক্রমণের ধারা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশও। খেলার ৫৪ মিনিটে বাংলাদেশ অধিনায়ক মামুনুলের দারুণ একটি শট চলে গেছে গোলপোস্টের ওপর দিয়ে। ৬০ মিনিটে থাইরা ফ্রি কিক থেকে গোলের চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের গোলরক্ষক শহীদ তা ব্যর্থ করে দিয়েছেন।
খেলার ৬৪ মিনিটে অসাধারণ সুযোগ মিস করেছে থাইল্যান্ড। প্রথম ধাপে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। কর্নার কিক থেকেও দু’দফায় সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেনি সফরকারীরা।
খেলার ৭০ মিনিটে বাংলাদেশ দল বল নিয়ে থাই বক্সে প্রবেশ করলে তা নিয়ন্ত্রণে নিতে এগিয়ে আসেন থাইল্যান্ডের গোলরক্ষক। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি তিনি। তবে এমন ভালো সুযোগ শেষ অবধি কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
ম্যাচের বাকিটা সময় লিড ধরে রাখতে কিছুটা এলোমেলো ফুটবলই খেলেছে বাংলাদেশ। তবে এর মাঝেও বেশ কিছু আক্রমণ শানিয়েছে মামুনুলবাহিনী। অন্যদিকে, গোল পাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের প্রতিরোধের দেয়াল টপকাতে পারেনি থাইল্যান্ড। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে হাতে নিয়েছে স্বপ্নের ফাইনালের টিকেট।