গাইবান্ধায় বাসে পেট্রলবোমা, পুড়ে কয়লা শিশুসহ ৪ : আহত ৪২, আশঙ্কাজনক ১৫
গাইবান্ধায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলায় কমপক্ষে চারজন দগ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো কমপক্ষে ৪২ জন। এদের মধ্যে ২৯ জন গাইবান্ধা ও ১৩ জনকে রংপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরো বেশি বলা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গতকাল শুক্রবার রাতে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে সদর উপজেলার তুলসীঘাটসংলগ্ন বুড়িরঘর এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা চলমান অবরোধের ৩২তম দিনে গতকাল এ ছাড়া বিছিন্নভাবে দু-
একটি স্থানে গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ফেনীতে অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রলবোমায় বাচ্চু হাওলাদার (২৮) নামের এক ট্রাকচালকের সহকারী দগ্ধ হয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের মালিকানাধীন ক্লিনিক ও বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় তারেক রহমানের আইনজীবী যুবদল নেতা হেলাল উদ্দিনের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে ছাত্রলীগের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় আলাদাভাবে ১৮ জন আহত হয়েছে। ছয় স্থানে সাত গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সাতক্ষীরা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ১২২ জনকে গ্রেপ্তার ও আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাগুরায় পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে পালানোর সময় ইমরান হোসেন নামের এক শিবিরকর্মীকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও আঞ্চলিক অফিস থেকে পাঠানো খবরে-
গাইবান্ধা : গতকাল রাতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে নাপু এন্টারপ্রাইজের যাত্রীবাহী বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। পেছনে যাত্রীবোঝাই আরো চারটি বাস এবং পুলিশের একটি গাড়ি ছিল। সামনের নাপু এন্টারপ্রাইজের বাসটি রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার তুলসীঘাটসংলগ্ন বুড়িরঘর এলাকায় পৌঁছার পর আক্রান্ত হয়। সামনের দিকের জানালা দিয়ে দুষ্কৃতকারীরা পেট্রলবোমা ছুড়ে মারলে মুহূর্তের মধ্যে পুরো গাড়িতে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই পুড়ে কয়লা হয়ে যায় চারটি দেহ। এদের মধ্যে একটি শিশু, একজন নারী ও অন্য একজন পুরুষ। মরদেহ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন আরো কমপক্ষে ৪২ জন। এদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের বগুড়া ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বোমার আগুনে ভস্মীভূত বাসটির যাত্রী গার্মেন্টকর্মী ফরিদ ও জ্যোতি আক্তার দম্পতি জানান, বাসটিতে ৬০ থেকে ৬৫ জন যাত্রী ছিল। অধিকাংশই দিনমজুর শ্রেণির। অনেকে দাঁড়িয়েই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। বাসটি বুড়িরঘর এলাকায় আসামাত্র সামনের দিকে কাচ ভাঙার শব্দ হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের হলকা গ্রাস করে পুরো বাস। তারা দুজন জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে গেছেন।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষিকা অঞ্জলী রানী দেবী বলেন, বাসটিতে বোমা ছুড়ে মারার পর আগুন ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব যাত্রী একসঙ্গে আর্তচিৎকার শুরু করে। তাদের আর্তনাদে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। মানুষজন ঘর থেকে রাস্তার দিকে ছুটে যায়। কিন্তু তখন পুরো গাড়িতে আগুন জ্বলছিল। এ অবস্থায়ই আহত অবস্থায় যতটা সম্ভব যাত্রীদের বের করে আনার চেষ্টা চালায় সবাই।
এদিকে ঘটনাস্থল ও গাইবান্ধা হাসপাতাল ঘুরে তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও অনেকেই বলছিলেন যে ছয়জন নিহত হয়েছে। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু বকর সিদ্দিক তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।