বরিশাল ও গাইবান্ধায় পেট্রোলবোমায় নিহত ৮
বরিশালে ট্রাকে ও গাইবান্ধায় বাসে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে চালকসহ ৮ জন নিহত হয়েছেন।
বরিশালে শনিবার ভোরে একটি ট্রাকে ও গাইবান্ধায় শুক্রবার রাতে একটি যাত্রীবাহী বাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
বরিশাল অফিস ও গাইবান্ধা প্রতিনিধির পাঠানো খবর :
বরিশাল : জেলার গৌরনদীর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাহিলারায় শনিবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় ট্রাকচালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।
নিহত ট্রাকচালক ইজাজুলের বাড়ি ফরিদপুর জেলার বদরপুর গ্রামে, হেলপার মুন্নু একই জেলার মোল্লাবাড়ী সড়কের বাসিন্দা। অপরজন ট্রাকচালকের শ্বশুর। তার নাম জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাহিলারা বাসস্ট্যান্ড এলাকা পার হওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা ট্রাকে (ঢাকা মেট্রো-ট-১৫৯৩২৬) পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে ট্রাকে আগুন লেগে যাওয়ায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফলে ট্রাকটি রাস্তার পাশের মেহগনি গাছে ধাক্কা খায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা ট্রাকে আরেকটি পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করলে চালকের কেবিনে আগুন ধরে যায়।
পুলিশ সুপার (এসপি) এ কে এম এহসান উল্লাহ জানান, শনাক্তের জন্য স্থানীয় অশাকাঠি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাশ রাখা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, তারা উজিরপুর থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে আরআরএফ থেকে ২৭ জন পুলিশ ও ১০টি স্পটে আনসার রেখেছেন। এ ছাড়া গৌরনদী থানার পাশাপাশি টরকীতে পুলিশ ক্যাম্প ও বাটাজোরে পুলিশের তদন্তকেন্দ্র রয়েছে। তার পরও এ দুর্ঘটনা ঘটায় তারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছেন।
গাইবান্ধা : জেলার সদর উপজেলায় ঢাকাগামী নাপু এন্টারপ্রাইজের একটি বাসে শুক্রবার রাত পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে দগ্ধ হয়ে দুই শিশুসহ নিহত হয়েছেন পাঁচজন। এ ছাড়া চালক ও হেলপারসহ অন্তত ৩৯ যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সিচা পাঁচপীর বাজার থেকে ঢাকাগামী নাপু এন্টারপ্রাইজের একটি বাস ৫০ জনের বেশি যাত্রী নিয়ে শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে গাইবান্ধা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়। রাত ১১টার দিকে বাসটি তুলশীঘাটের গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে পৌঁছলে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। এতে বাসে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলেই এক শিশুর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আরও তিনজন। এ ছাড়া রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার সকাল ৭টায় মারা গেছে আরও এক শিশু।
নিহত সবাই গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তারা হলেন- দক্ষিণ কালীর খামার গ্রামের খয়রব হোসেন দুলুর ছেলে সৈয়দ আলী (৪২), পশ্চিম চণ্ডীপুর গ্রামের সাইখ মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগম (৪২), চণ্ডীপুর গ্রামের শাজাহান আলীর ছেলে সুমন মিয়া (২২), মধ্যপাড়া গ্রামের নাগের খামার গ্রামের বলরাম দাসের মেয়ে শিল্পী (১০) ও চণ্ডীপুর গ্রামের মোহম্মদ তারা মিয়ার ছেলে সুজন (১০)।
ঘটনাস্থল থেকে সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান দ্য রিপোর্টকে জানান, পেট্রোলবোমা মারার সঙ্গে সঙ্গে কোচটির বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়। ফলে কোচের অধিকাংশ যাত্রী দগ্ধ হন। স্থানীয়দের সহায়তায় আহত চালক ও হেলপারসহ অন্তত ৩৯ যাত্রী দগ্ধ হন।
তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডা. আবু হানিফ দ্য রিপোর্টকে জানান, দগ্ধ ১১ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চার-পাঁচজনের অবস্থা বেশি আশঙ্কাজনক।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ রাজিউর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, অবরোধকারীরা রাতের আঁধারে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে ঢাকাগামী কোচে পেট্রোলবোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া বাকি তিনজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
এদিকে শনিবার সকালে হাসপাতালে মারা যায় সুজন নামে এক শিশু। সে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের চণ্ডীপুরের মোহম্মদ তারা মিয়ার ছেলে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আশরাফুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর পরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থলসহ গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে র্যাব, বিজিবির পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক এহসানে এলাহী জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।