আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদন ‘আ.লীগকে সংলাপের আহবান, বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে হবে’
বাংলাদেশের চলমান অচলাবস্থা, সহিংসতা বন্ধ এবং গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচিত বিএনপিকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো। অন্যদিকে, বিএনপির উচিত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা। নতুবা বাংলাদেশ রাজনীতি-শূন্য সহিংস দেশে পরিণত হবে।
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ সোমবার ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট চিহ্নিতকরণ’ (ম্যাপিং বাংলাদেশে’স পলিটিকেল ক্রাইসিস) শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ভিন্নমত বা দ্বিমত দমনের ক্ষেত্রে সহনশীল আচরণ করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে দমন-নিপীড়ন কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যেও প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।
এতে বলা হয়, গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ও নির্বাচনী সংস্কারের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত বিএনপিকে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানানো। ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করা প্রয়োজন। এই নির্বাচনের মাধ্যমেও দুই দলের মধ্যে সংলাপের সূত্রপাত হতে পারে।
বিএনপিকে অহিংস রাজনীতির প্রতি অঙ্গিকারবদ্ধ হতে হবে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, (বিএনপির) জামায়াতে ইসলামীকে ছাড়তে হবে। বর্তমান সহিংসতা ও অর্থনৈতিক দুরাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিএনপিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
গত পাঁচ জানুয়ারি বাংলাদেশের চলমান জাতীয় সংসদের এক বছর পূর্তির সময় বড় দুইটি দলের বিপরীতমুখী কর্মসূচির পর থেকে সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটেই চলছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, এই সহিংসতায় অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রতিদিনই আহতদের সংখ্যা বাড়ছে। স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি—এই দুইটি বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে রেষারেষি চলছে। বর্তমান সময়ে তাদের এই রেষারেষি বাংলাদেশকে অচলাবস্থার শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে।
অতি দ্রুত এই সহিংসতা বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশ মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল দেশে পরিণত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর বিএনপি চাইছে রাজপথের শক্তির মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করতে এবং ক্ষমতায় যেতে।
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল দেশটিকে ঐক্য গড়া থেকে আরো বিভাজনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আপসের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রকে পুনর্জীবিত করা উচিত উল্লেখ করে এতে বলা হয়, নতুনবা রাজনীতিতে হিংসা ও সহিংসতা আরো ছড়িয়ে পড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুইটি প্রধান বড় রাজনৈতিক দল একে অন্যের সঙ্গে স্বতস্ফূর্তভাবে কাজ করতে না চাওয়ায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পরের শ্রদ্ধাবোধ নেই। এতে করে দেশটিতে সরকারি এবং বিরোধী দল কারোরই আইনের শাসনের প্রতি আস্থা নেই, দেশটিতে চরমপন্থী ও অপরাধমূলক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে। যা রাজনীতিকে শূন্য করে দিতে পারে। ইতিমধ্যেই দেশটিতে ইসলামিক সহিংসতা মাথাচাড়া দিয়েছে, যা গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য হুমকি।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ একটি স্বাধীন, অলাভজনক এবং বেসরকারি সংগঠন। যা বিভিন্ন পর্যায়ের দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ এবং সমাধানে অঙ্গীকারাবদ্ধ।